ভেষজ

অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ।

বর্তমান পৃথিবীতে চিকিৎসা পদ্ধতির কথা চিন্তা করলে সবার আগে আমাদের মনে আসবে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির কথা, অনেকে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি ছাড়া আরো কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আছে কিনা তা হয়ত জানেনও না ।যেখানে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির সূচনা হয়েছে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে অপরদিকে প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতী হিসেবে সুপরিচিত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতির সূচনা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সাল থেকে । 

যখন আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতির কথা আসবে তখন অশ্বগন্ধার বিষয়ে অবশ্যই আলোচনা থাকবে,অশ্বগন্ধা ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতি একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।

অশ্বগন্ধা কিঃ 

অশ্বগন্ধা কথাটি মূলত এসেছে  অশ্বগন্ধা গাছের শিকড় থেকে । অশ্বগন্ধা গাছের শিকড় ও পাতা সিদ্ধ করলে ঘোড়ার মুত্রের মত এক প্রকার গন্ধ ছড়ায় সেই থেকে এর নাম অশ্বগন্ধা । 

অশ্বগন্ধার বৈজ্ঞানিক নাম [withania somnifera] উইথানিয়া সমনিফেরা। এর ঔষধি গুনাগুনের জন্যএকে উইন্টার চেরি বলেও ডাকা হয় । 

অশ্বগন্ধার ভেষজ উপাদানঃ

অশ্বগন্ধাকে মূলত ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।  এতে বিভিন্ন প্রকারের ভেষজ উপাদান রয়েছে,যার মাঝে অন্যতম হলো অ্যালকালয়েড,ট্যানিনস, স্যাপোনিনস ও স্টেরডাল লাক্টোনস । বিভিন্ন বার্ধক্য জনিত রোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে এ সকল উপাদান সাহায্য করে । এছাড়াও যৌন দুর্বলতা ও বিভিন্ন প্রদাহ প্রতিরোধে অশ্বগন্ধা  খুবই কার্যকরী । 

১০০ গ্রাম অশ্বগন্ধার গুড়ায় থাকা পুষ্টিমানঃ

উপাদানক্যালোরি
এনার্জি২০০ কিলো ক্যালরি
ফাইবার৭৫ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট৭৫ গ্রাম

অশ্বগন্ধার প্রকারভেদ ও চেনার উপায়ঃ

অশ্বগন্ধা গাছ মূলত দুই প্রকারের হয়ঃ

১. জংলি অশ্বগন্ধা।

২. সাধারণ  অশ্বগন্ধা। 

আমরা প্রধানত, সাধারণ অশ্বগন্ধা গাছ থেকে ওষুধ গ্রহণ করি।জংলি অশ্বগন্ধা অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য। 

সাধারণ অশ্বগন্ধার পাতা হয়ে থাকে নরম ও পাতলা , এর ফল দেখতে অনেকটা লাল চেরির মত। অপরদিকে জংলি অশ্বগন্ধার পাতা অনেকটাই মোটা হয়ে থাকে সাধারণ অশ্বগন্ধার তুলনায় ।

অশ্বগন্ধার উপকারিতাঃ 

ভেষজ ওষুধ হিসেবে অশ্বগন্ধার ঔষধি গুন ও স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক । এর ঔষধি গুণের কারণে প্রাচীনকাল থেকে এর চাহিদা ও পরিচিতি ব্যাপক , চলুন এর কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাকঃ 

যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধাঃ 

অশ্বগন্ধার অন্যতম প্রধান উপকারী দিক হচ্ছে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এর ব্যবহার, একারণে একে ভারতীয় জিন-সেং বলা হয় । মানব দেহে টেস্টোটরন ও প্রোজেস্টরন, যৌন ক্ষমতা ঠিক রাখতে অত্যন্ত ভূমিকা রাখে।অশ্বগন্ধা ব্যবহারে এই উভয় প্রকারের হরমোন মানবদেহে বৃদ্ধি পায় । 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধাঃ

দেহ সুস্থ রাখতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকা অত্যন্ত জরুরী, দেহের মাঝে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলে শরীরে বিভিন্ন প্রকারের রোগ বাসা বাঁধে ।অশ্বগন্ধার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।এছাড়াও অশ্বগন্ধার মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেন্টরি মানুষের শরীরের বিভিন্ন ইনফেকশন দ্রুত সারাতে সহায়তা করে । একটি গবেষণাতে এসেছে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল, ইউরোজেনিটাল এবং ফুস্ফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অশ্বগন্ধা  অত্যান্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ

মেরি উইন্টারস একজন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক । তার মতে অশ্বগন্ধা  রেডিয়েশন থেরাপি ও কেমোথেরাপীর সাথে মিলিত হয়ে অনকোলজি চিকিৎসার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে এবং কেমোথেরাপি পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। 

হার্টের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ  

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ আয়ুর্বেদ রিসার্চ এর একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, হৃদরোগের জন্য অশ্বগন্ধা অত্যন্ত উপকারী ।  

অশ্বগন্ধা ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন প্রকার হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে যায় যেমনঃ 

১. উচ্চ রক্তচাপ

২.উচ্চ কলেস্টেরল

৩.বুকে ব্যাথা

৪.হৃদরোগ 

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ 

অশ্বগন্ধায় থাকা অ্যান্টিহাইপারলিপিডেমিক এবং অ্যান্টিডায়াবেটিক পদার্থ রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম করে।

অনিদ্রা দূর করনে অশ্বগন্ধাঃ

বর্তমানে অনিদ্রা রোগ মহামারির আকার ধারণ করেছে,ডিজিটাল মিডিয়ার এই যুগে এসে রাত জাগা সকলের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে ।অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রাতে ঘুমোতে পারছে না,  তাদের জন্য অশ্বগন্ধা হতে পারে উত্তম সমাধান, অশ্বগন্ধাতে থাকা অ্যানজাইলটিক উপাদান স্নায়ু তন্ত্রের ওপর কাজ করে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ফলে শরীরে দ্রুত ঘুম চলে আসে । 

শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধঃ 

যুগ যুগ ধরে অশ্বগন্ধা গাছের ছালের রসকে প্রাকৃতিক শক্তিবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই রস সেবনের ফলে শরীরের পেশী শক্তি বৃদ্ধি পায় ,পুরুষদের শুক্রাণু বৃদ্ধিতেও এটি সহায়তা করে । দুধ ও ঘি এর সাথে অশ্বগন্ধার পাতা ভেজে খেলেও শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়,শারীরিক অবসাদ ও মাথা ধরা দূর হয় ।

টোটকা চিকিৎসায় অশ্বগন্ধার ব্যাবহারঃ 

অশ্বগন্ধার মূল গুড়ো করে খেলে সর্দি কাশি থেকে উপশম হয় । অশ্বগন্ধা খাওয়ার ফলে দূর হতে পারে চোখের ব্যথা । ক্রনিক ব্রংকাইটিস নির্মূলে অশ্বগন্ধা অত্যন্ত উপকারী । কাশি থেকে বাঁচতে অশ্বগন্ধার গুড়োর সাথে মিছড়ি মিশিয়ে খেতে হয়। মাঝে মাঝে শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধিতেও অশ্বগন্ধা ব্যবহৃত হয় কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।  

পেটের চিকিৎসায় অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ

পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা , হজমে সমস্যা থেকে বাঁচতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়। 

ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অশ্বগন্ধাঃ

অশ্বগন্ধার মূলে ও পাতার মাঝে থাকে এন্টি ডায়াবেটিস পদার্থ যা ডায়বেটিস কন্ট্রোলে ভূমিকা রাখে ।এর মূলে ও পাতার কোষের মাঝে ফ্লাভোনয়েডস  নামক একটি পদার্থ থাকে যা ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীর দেহে লিপিডের পরিমাণ ঠিক রাখতে অশ্বগন্ধা ভূমিকা রাখে। 

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে মস্তিষ্কের আঘাত বা স্মৃতিশক্তি লোপের সমস্যা সমাধান করতে অশ্বগন্ধা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং অশ্বগন্ধায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নার্ভ কে ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করে। 

থাইরয়েড থেকে বাঁচতে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ

মানবদেহে থাইরক্সিন নামক হরমোনের অভাব,থাইরয়েড রোগ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। অশ্বগন্ধা খাওয়ার ফলে শরীরে থাইরক্সিন নামক হরমোন প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।ফলে থাইরয়েড রোগ হওয়ার আশঙ্কা দূর হয়। 

আর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসায় অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ

আয়ুর্বেদ চিকিৎসাতে আর্থ্রাইটিস রোগ থেকে বাঁচতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয় ।প্রচন্ড ব্যথা কমাতে এটি সাহায্য করে ।

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ 

অশ্বগন্ধা এক প্রকারের অ্যাডাপ্টোজেন যা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও অশ্বগন্ধা তে থাকা  অ্যানজাইলটিক উপাদান, স্নায়ুতন্ত্রের উপর চাপ কমাতে ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অশ্বগন্ধার মাঝে অ্যাড্যাপটোজেন থাকায় এর নির্যাস মনের উদ্বেগ ও অবসাদ দূর করতে উপযোগী। 

হরমোনের যে সকল সমস্যার কারণে খিটখিটে ভাব ,দুশ্চিন্তা , মানসিক চাপ থাকে অশ্বগন্ধা খাওয়ার পরে তা দূর হয়ে যায়। 

রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ 

দেহকে সুস্থ রাখতে,অবশ্যই দেহের মধ্যে সাবলীল ভাবে রক্ত চলাচল করতে হবে । রক্ত চলাচলে বাধা প্রাপ্ত হলে শরীর খুব দ্রুতই দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়বে। রক্ত চলাচল  স্বাভাবিক রাখতে ও হৃদপিণ্ডকে রোগ থেকে বাঁচাতে অশ্বগন্ধার জুড়ি মেলা ভার। অ্যাড্রিনালিন গ্লান্ডের সমস্যা দূর করনে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের  মত অনুসারে , অশ্বগন্ধা শরীরের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং শরীরের পেশী শক্তির পরিমাণ বাড়ায়। 

চুল ও ত্বকের যত্নে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ

অশ্বগন্ধা গাছের রস,অকালে চুল পাকা রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় । চুল পড়া রোধ করতে ও চুলের গোড়া মজবুত করতেও একটি ব্যবহার করা যায় । অশ্বগন্ধার গুঁড়ো থেকে তৈরি হওয়া তেল মাথার খুশকি কমায় ।  

ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়। অশ্বগন্ধার ব্যবহারে , দ্রুত ত্বকে বার্ধক্য আসা বা ত্বকের ভাজ পড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

বাত রোগ নিরাময়ে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ 

গরম ঘি বা দুধ এবং অশ্বগন্ধার গুড়া ও চিনি একসাথে মিশিয়ে খেলে বাত ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া যায় । 

কাম উত্তেজনা সৃষ্টিতে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ

অশ্বগন্ধা প্রাচীনকাল থেকেএকটি আফ্রোডাইজিয়াক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বিখ্যাত শাস্ত্র,কামসূত্রের মাঝে অশ্বগন্ধাকে অতি উত্তম যৌন উত্তেজক ভেষজ পদার্থ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।কাম আকাঙ্ক্ষা হ্রাস ও লিঙ্গ নিস্তেজ চিকিৎসার কার্যকরী ভেষজ উপাদান হিসেবে অশ্বগন্ধা সু-পরিচিত । পুরুষরা যখন অশ্বগন্ধা খাওয়া শুরু করে তখন দেহের মাঝে নাইট্রিক অক্সাইড এর পরিমান বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয় এর ফলে যৌন চাহিদা ও তৃপ্তি বৃদ্ধি পায় । 

সাপের কামড়ে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ 

সাপের কামড়ের স্থানে অশ্বগন্ধার ব্যবহার অতি প্রাচীন ও কার্যকরী পদ্ধতি ,তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত ।

চর্মরোগ সারাতে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ 

চর্মরোগ বা চুলকানি সারাতে অশ্বগন্ধা অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা পালন করে এছাড়াও অশ্বগন্ধার পাতার গুঁড়ো দিয়ে পেস্ট তৈরি করে তা চামড়ায় ব্যবহার করলে ত্বকে থাকা চুলকানির জীবাণু ও কৃমি মরে যায় । অশ্বগন্ধা ব্যবহারে শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ ও জ্বালা পোড়া নির্মূল হয়।হারপিস রোগ নির্মূলে অশ্বগন্ধার শিকড় কে গুঁড়ো করে শরীরে লাগাতে হয় । 

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ 

অশ্বগন্ধার গুঁড়ো বা পাউডার, কুসুম কুসুম গরম পানিতে বা দুধের সাথে গুলে খেলে  কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।  

লিউকোরিয়া নিরাময়ে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ

অশ্বগন্ধার মূল গুড়ো করে গরুর দুধের সাথে খেলে লিউকোরিয়া রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। 

অশ্বগন্ধা গুঁড়ো করার নিয়মঃ

মাটির হাঁড়িতে অশ্বগন্ধার মূলগুলো ভরিয়ে রাখুন এরপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে নিন।পরবর্তীতে অশ্বগন্ধার মূল গুলো হাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গুড়ো করে ফেললেই, তৈরি হয়ে গেল অশ্বগন্ধার গুড়ো। লক্ষ্য রাখতে হবে অশ্বগন্ধার গুড়ো যেন সরাসরি সূর্যালোকে না থাকে।

অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়মঃ 

আমাদের দেশে অশ্বগন্ধা সাধারণত ট্যাবলেট ও গুড়ো আকারে পাওয়া যায় , অনেক সময় বাজারে অশ্বগন্ধার মূলও কিনতে পাওয়া যায় । 

অশ্বগন্ধা ট্যাবলেট প্রতিরাতে একটি করে খাওয়া উচিত। গুঁড়ো অশ্বগন্ধা খেতে হলে চার-পাঁচ গ্রাম অশ্বগন্ধার গুঁড়োর সাথে সাথে এক চামচ মধু ,এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারি ।

অশ্বগন্ধার  মূলও পানিতে সিদ্ধ করে বা দুধের সাথে সিদ্ধ করে খেতে পারি। 

অশ্বগন্ধার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ

অন্যান্য সকল ওষুধের মত অশ্বগন্ধারও কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে,

একটানা দীর্ঘদিন অশ্বগন্ধা খেলে পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও খাবারে অরুচি হতে পারে।

অশ্বগন্ধা রক্তের মাঝে থাকা  শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়, তাই যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম তারা অশ্বগন্ধা খাবেন না।

গর্ভবতী মহিলাদের অশ্বগন্ধা খেতে নিরুৎসাহিত করা হয় কারণ এটি খেলে গর্ভের বাচ্চার সমস্যা হতে পারে ।

যারা ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ,ডিপ্রেশন ইত্যাদি রোগে ভুগছেন তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ  অনুসারে প্রয়োজনমতো অশ্বগন্ধা খাবেন। 

অশ্বগন্ধা খাবার ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস এর সমস্যাও হতে পারে ।

অশ্বগন্ধা রক্তের মাঝে থাকা প্লাটিলাস কমিয়ে দেয় , তাই যাদের রক্তে প্লাটিপাস কম তারা অশ্বগন্ধা খাবেন না।

অশ্বগন্ধা যেখানে কিনতে পাবেনঃ

আয়ুর্বেদ ঔষধের দোকানে,অর্গানিক ফ্রূট ও অনলাইন শপে অশ্বগন্ধা কিনতে পাওয়া যায় তবে এছাড়াও বিভিন্ন ভেষজ ঔষধি বাগানেও অশ্বগন্ধা পাওয়া যেতে পারে। 

অশ্বগন্ধার দামঃ

বাজারে সাধারণত অশ্বগন্ধার গুড়া সহজেই পাওয়া যায় এসব গুড়া প্রতি ১০০ গ্রামের দাম পরে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ।

পরিশেষেঃ

সার্বিকভাবে বলা যায় যে অশ্বগন্ধার উপকারিতা অনেক সেই তুলনায় অশ্বগন্ধার অপকারিতা নেই বললেই চলে । এটি অত্যন্ত উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ । বাকি অন্য সকল ঔষধের মতো এরও রয়েছে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ ঔষধ সেবন করতে হবে এবং আশা করা যায় নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবন আমাদের দেহের জন্য অবশ্যই সুফল বয়ে আনবে ।

References

https://www.webmd.com/vitamins/ai/ingredientmono-953/ashwagandha

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X