ঔষধ সেবনের সঠিক নিয়ম-কানুন! ঔষধ খাওয়ার দোষেও রোগ বাড়ে কমে!
আমাদের দেশে এখনও ঔষধ সেবনের সঠিক নিয়ম শতকরা ৬০ ভাগ মানুষই জানেনা। এজন্য অনেক সময় ঔষধের কার্যকারীতা ব্যাঘাত ঘটে। হয়ত কার্যকারীতা বাড়ে- না হয় কমে। আবার অনেক সময় বিপরীত ক্রিয়াও হয়ে যেতে পারে। অথবা একটা রোগ সারাতে গিয়ে, আরেকটার সৃস্টি হয়। এরজন্য প্রায় সময় রোগীর ঔষধ সেবনকেই দায়ী করা হয়।
ব্যথানাশক ওষুধ :
যেমন: ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম, (Diclofanac Sodium) ন্যাপ্রোক্সেন, ( Naproxen) আইবুপ্রোফেন, (Ibuprofen) অ্যাসপিরিন, (Aspirin) ও কিটোরোলাক (Ketorolac) ইটোরিকক্সিব (Etoricoxib) ইত্যাদি ভরা পেটে গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় অন্ত্র ফুটো হয়ে যেতে পারে, তীব্র এসিডিটি সহ নানান সমস্যা দেখা দেয়।
প্রোটন পাম্প ইনহেবিটর PPI
যেমন: ওমিপ্রাজল,(Omeprazole) প্যান্টোপ্রাজল, (Pentoprazole) ইসোমেপ্রাজল, (Esomiprazole) ইত্যাদি খাবারের আগে সেবন করতে হবে। খাবারের পর খেলে কার্য্যকারীতায় তেমন ফল পাওয়া যায়না।
এবং এজাতীয় ঔষধগুলো একটানা ২ মাসের বেশী সেবন করা উচিত নয়। এতে আবার আরেকটি নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন পাচনরস নির্গত হতে বাধাঁ প্রদান করে। তাতে হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। আবারও নতুনভাবে পেটে ব্যাথা তৈরী হতে পারে।
অ্যান্টাসিড খাবারের পর না খেয়ে ৩০ মিনিট পর খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ঔষধ সেবনের সঠিক নিয়ম মেনে চলুন।
ঠাণ্ডা-সর্দি বা অ্যালার্জির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন
যেমন: লোরাটাডিন, (Loratedine) সেটিরিজিন, (Cetirizine) ফেক্সোফেনাডিন, (Fexofenadine) ইত্যাদি, খালি পেটে গ্রহণ করলে এর কার্যকারিতা বেশি হয়। এবং এগুলো কিছুদিন কন্টিনিউ করা উচিত। অনেকে ২-৩ টা খেয়ে সুস্থতাবোধ করলেই বন্ধ করে দেন। এটা উচিত নয়, বরং প্রয়োজন অনুসারে ১৫-২০ দিন খেতে হয়।
সিপ্রোফ্লোক্সাসিন জাতীয় ঔষধ :
খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিয়ে সেবন করাই ভালো। সিপ্রোফ্লক্সাসিন গ্রহণের ২ ঘণ্টার মধ্যে দুগ্ধজাত খাবার বা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, আয়রন বা জিংকযুক্ত খাবার খাওয়া উচিৎ না।
আয়রন ক্যালসিয়াম :
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, আয়রন ট্যাবলেট, মাল্টিভিটামিন খাবার কয়েক ঘণ্টা আগে বা পরে সেবন করতে পারেন। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সকাল অথবা দুপুরে সেবন করা উত্তম। রাতে সেবন করা ঠিক নয়। কারন, ক্যালসিয়াম সেবন করে হাটাচলা করলে, সঠিকভাবে শোষণ হয়। আর ঘুমিয়ে পড়লে কিডনীতে জমা হয়ে তা বেশীরভাগ প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয়ে যেতে পারে। আয়রন আর ক্যালসিয়াম একই সময়ে সেবন অনুচিত। বেশীরভাগ শোষণ না হয়ে প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয়ে যাবে। তাই দিনের অন্যান্য সময়ে পালাক্রমে সেবন করবেন।
খালি পেটে সেবনের ঔষধগুলো :
পেনিসিলিন খালি পেটে সেবন করাই ভালো।
এজিথ্রোমাইসিনও খালি পেটে ভাল কাজ করে। তবে খালি পেটে সেবন করতে স্মরন না থাকলে, সময়কে গুরুত্ব দিয়ে ভরা পেটেই সেবন করতে হবে। কারন এগুলো এন্টিবায়োটিক। সময় হিসাব করে এবং ঔষধ সেবনের সঠিক নিয়ম মেনে এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করতে হয়।
পানি বেশী পরিমানে প্রয়োজন:
কিছু ওষুধ যেমন_ কোট্রিম সেবন করলে বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে। না হলে এটি কিডনিতে পাথর তৈরি করে সমস্যা করতে পারে। আবার ডক্সিসাইক্লিন ও ক্লিন্ডামাইসিন এর সাথে বেশী পানি পান না করলে, গলা জ্বালা, বুকজ্বালা ও এসিডিটি হয়। আরেকটা কথা – পানির কথা যখন আসছে, এটাও বলে নেয়া প্রয়োজন। কখনও ফ্রিজের ঠান্ডা পানি দিয়ে ঔষধ খাবেন না। কুসুম গরম পানি অথবা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ঔষধ খাবেন।
একসঙ্গে বেশ কয়েকটি ওষুধ সেবন করলে ওষুধের মধ্যে প্রতিক্রিয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধের কার্যকারিতা কমতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধের কার্যকারিতা বাড়তে পারে। এ দুটোই বেশ ক্ষতিকর। তাই এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মানতে হবে। এখানে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতিত অন্যকোনো অতিরিক্ত ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
আরও পড়ুন লিভার ভাল রাখার উপায় | সুস্থ্যতার জন্য পড়ুন।
হাঁপানি আছে এমন ব্যক্তির ব্যথানাশক ওষুধ, বেটা ব্লকার-এটেনোলল, প্রোপানোলল সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রেগন্যান্সীতে সতর্কতা :
গর্ভাবস্থায় ওষুধ সেবন গর্ভধারণ ও ভ্রূণের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। থ্যালিডোমাইড, রেটিনয়েড, ক্যান্সারের ওষুধ সেবন করলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে। গর্ভকালীন টেট্রাসাইক্লিন শিশুর দাঁত ও হাড়ের গঠনে বাধা দেয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ওষুধ শিশুর হাইপোগ্লাইসেমিয়া করে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই এ সময় ইনসুলিন নিতে হয়।
তবে ডাক্তারকে জানানোর পর যে ঔষধ দেয়া হয়, ক্ষতির ভয়ে তা যদি আপনি এড়িয়ে চলেন, তাহলে আবার হিতে বিপরীত। যেমন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, নরমাল প্যারাসিটামল, এন্টি এমিটিক ঔষধ ইত্যাদি আপনার প্রয়োজন হতেই পারে। এগুলোকে ভয়ে না খেলে বিপদও হতে পারে। তাই সাবধানতা যেন অতিরিক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন আধুনিক চিকিৎসা বনাম কুসংস্কার! গুরুত্বপুর্ন তর্ক যুদ্ধের অবসান।
গণোরিয়া থেকে মুক্তি চান | Gonorrhoea Infection | কারন |লক্ষন | বিস্তারিত