জোঁকের তেল নয়! জোঁকের কামড় শরীরের জন্য বেশী উপকারী।
জোঁকের নাম শুনে অনেকেরই গা ঘিন ঘিন শুরু হয়ে যায়। হবারই কথা, কারন পানি বা জঙ্গলে যাওয়া মাত্রই কোত্থেকে চুপ করে এসে রক্ত খাওয়া শুরু করে। শেষ করার আগ পর্যন্ত কিছুই বুঝে উঠা সম্ভব হয়না। তাই আমার মত অনেকেই জোঁকের নাম শুনলে দৌড়ে পালায়, জোঁকের কামড়ে র ভয়ে।
জোঁকের কামড়ে কি হয়?
একটি জোঁক মানুষের শরীর থেকে প্রজাতি অনুসারে ২ থেকে ১৫ মিলিলিটার রক্ত চুষে নিতে পারে। তাই অনেক জায়গায় জোঁককে রক্তশোষা প্রাণী হিসাবে আখ্যায়ীত করা হয়। তবে, এই রক্তশোষনে আমাদের দেহের কোন ক্ষতি হয়না। বরং খুব বেশী উপকারের প্রমান পাওয়া গিয়েছে। জোঁকের কামড়ে মানব দেহের কোন ক্ষতি হওয়ার প্রমান নাই বললেই চলে। তাই আতংকিত হওয়ারও কিছু নাই।
জোঁকের কামড়ে কি কি উপকার হয়!
জোঁক যখন রক্ত চুষে, তখন তার মুখ থেকে লালা রক্তে মিশিয়ে দেয়। এতে ক্যালিন, ক্যালিক্রিন, ও হিরুডিনের মতো কিছু উৎসেচক থাকে। যা রক্তে থাকা বিষাক্ত ও দূষিত পদার্থ দূর করতে সক্ষম। শরীরের কোথাও পচনশীল স্থানে জোঁকে কামড়ালে, ঐস্থানে নতুনকরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। বিষাক্ত টক্সিন দূরীভুত হতে সহায়তা করে। যেমন – একজিমা বিখাউজ জাতীয় চর্মরোগেও উপকার হয়। ব্যাথাস্থানে জোঁকের কামড় উপকারী। কারন ঐ স্থানে জমাট বাঁধা রক্তকে পাতলা করে, রক্তচলাচল স্বাভাবিক করে। তাই ব্যাথাস্থানে আরাম পাওয়া যায়।
ডায়বেটিস ও জীবাণুনাশে জোঁক থেরাপি
জোঁকের কামড়ে তার লালা থেকে ডেস্টাবিলেস্ট নামে এক ধরনের প্রোটিন রক্তে মিশ্রিত হয়। যার ফলে শক্তীশালী কিছু জীবাণু ধ্বংশ করতে পারে এই থেরাপি। তাছাড়া জোঁকের লালা থেকে নির্গত পদার্থ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে। যা ডায়বেটিসের রোগীর জন্য অপরিহার্য্য। আদিকালের চিকিৎসা প্রথায় একটা প্রবচন আছে –
জোঁক দেখে পাবেনা ভয় – জোঁকের কামড়ে উপকার হয়।
জোঁকের থেরাপি কি আসলেই সত্যি!
থেরাপি চিকিৎসায় জোঁকের ব্যাবহার আজ থেকে নয়। বলতে পারেন, হাজার বছরের আদিকালের চিকিৎসা। ইংল্যান্ডের মত দেশে রানী ভিক্টোরিয়ার যুগ থেকেই নন্দিত এই জোঁক থেরাপির চিকিৎসা চলে আসছে। তখনকার আমলে বছরে প্রায় সোয়া চার কোটি জোঁকের ব্যাবহার হতো, চিকিৎসা খাতে। আর এতগুলো জোঁকের যোগান দিতে হতো -ওয়েলস নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে। জোঁক সরবরাহ করে ওয়েলস নামক প্রতিষ্টানের বছরে প্রায় দশ কোটি পাউন্ড আয় করত।
কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীতে জোঁকের ব্যাবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠায়, জোকের চাষ এবং এর ব্যাবহার প্রায় কমে গিয়েছিল। এখন আবার নতুনকরে এর উপকার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বের হওয়ায়, জোঁকের ব্যাবহার ও চাষ বৃদ্ধি পায়। সোয়ানসিজ বায়োফার্ম নামক প্রতিষ্ঠান এখন জোঁক চাষে এক নম্বর পজিশানে আছে। সারা ইউরোপে জোঁক সরবরাহ করে জোঁকের চাহিদা পুরন করে আসছে।
দেখতে ঘৃন্য হলেও জোঁকের কামড়ে রয়েছে বিশেষ উপকারীতা – হৃদযন্ত্রের রক্তজমাট, মাংসপেশীর সংকোচন, কাটাস্থান জোরা লাগানো, গায়ে পচনধরা, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রনসহ বহুবিদ রোগের উপকারী এই জোঁককে আজ থেকে ভয় নয়।