রোগ নির্নয়স্বাস্থ্য টিপস

নাকের পলিপাস দূর করার উপায়

নাকের পলিপাস নিয়ে বর্তমানে প্রায় ১৫-২০% মানুষ সর্দি, মাথাব্যাথা, মাথাভারবোধ সহ ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছে।
এটা আসলে, রক্তের ইসনোফিল ও সিরাম আইজিই এর পরিমাণ বেড়ে গেলে এসব সমস্যা দেখা দেয়, এবং নাকের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে যা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিগুলোতে অ্যালার্জি প্রদাহ সৃষ্টি করে। এবং এক ধরনের মাংসপিন্ড বাড়তে থাকে, যাকে পলিপ বলা হয়। প্রথমে এটি আকারে ছোটো থাকে এবং গোলাকার পিন্ড দেখা যায় । পরবর্তীতে এটি আকারে বড় হয়ে নাকের ছিদ্র বন্ধ করে দেয়।

পলিপাস কয় প্রকার হয়

নাকের পলিপাস দুই প্রকার হয়ে থাকে ।
১ – ইথময়ডাল পলিপাস যা এলার্জির কারণে দুই নাকে দেখা দেয়।
২ – এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপাস যা ইনফেকশনের কারণে এক নাকে হতে দেখা যায়। সাধারনত অনেক বাচ্ছাদের সর্দি লেগেই থাকে, এবং বাচ্ছা নখের সাহায্যে নাক খুটতে থাকে। ধারনা করা হয়, এসব থেকেই ইনফেকশন হতে পারে।

পলিপাস হওয়ার এর কারন –

সাধারনতঃ অ্যালার্জি জনিত কারন এবং দীর্ঘদিন নাকে ও সাইনাসের প্রদাহ থেকে পলিপাস হয় । ঋতু পরিবর্তন হলে অনেকের এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়, এই ঘন ঘন অ্যালার্জির কারনে পলিপাস হয় । অনেক সময় বংশগত কারনে পলিপাস হয়ে থাকে ।

পলিপাস এর লক্ষন –

পলিপাস এর একাধিক লক্ষন আছে। যেমন- ঘন ঘন হাঁচি , নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝড়া , নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম , নাক ও তালু শিরশির করা , খাবারে অরুচি, নাকে ব্যাথা , মাথা ব্যাথা , জ্বর জ্বর ভাব, ঘুমে নাক ডাকা, রোগা রোগা ভাব, মাঝে মধ্যে নাকের মাংস বের হয়ে যাওয়া, কন্ঠস্বরের পরিবর্তন ইত্যাদি ।

পলিপাসের এলোপ্যাথিক চিকিৎসা –

পলিপাসের চিকিৎসা এলোপ্যাথিকে সাধারনত অপারেশন করতে হয় । তবে অপারেশন করলেই যে ভালো হয়ে যাবে তা নিশ্চিত নয়। অনেক রোগীর পুনরায় পলিপাস হতে দেখা যায়। অ্যালার্জি হতে পারে এমন খাবার বা পরিবেশ থেকে দূরে পারলে এই রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব । যেমন – ঠান্ডা লাগা ও ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা, ফ্রিজের পানীয় ইত্যাদি।

এলোপ্যাথিক ঔষধ উপস্থিত আরাম দিতে পারে এমন কয়েকটি নাজাল ড্রপ ও নাজাল স্প্রে আছে। এগুলো যতদিন ব্যাবহার করবেন,ততদিন একটু কম বা উপসর্গগুলো প্রকাশ পাবেনা। আবার যখন আবহাওয়া পরিবর্তন হবে। তখন উপসর্গগুলো আবারও প্রকাশ পাবে। মুলতঃ এলোপ্যাথিকে অপারেশন ব্যতিত পলিপাসের তেমন কোন চিকিৎসা নাই বললেই চলে।

পলিপাসের হোমিও ঔষধ বা চিকিৎসা

পলিপাস সম্পর্কে ভালভাবে জানার পর রোগ নির্ণয় করে উপযুক্ত লক্ষণ ও সমস্যা সংগ্রহ করে হোমিও চিকিৎসা দিলে কখনো কখনো অপারেশন ছাড়াই নাকের পলিপাসের যন্ত্রণা থেকে বিনা কষ্টে-অতি সহজে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে এখন এমন হোমিও ডাক্তার পাওয়া মুশকিল। কারন, আমাদের দেশে এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রায় বিলুপ্ত হতে চলছে। ডিপলেড হোমিও ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি একটি প্যাটেন্ট করেছে, থুজা নাম দিয়ে, যে প্যাটেন্টে থুজার পরিমান বেশী আছে। এটা কয়েকমাস সেবন করলে, মোটামুটি ভাল থাকা যায়।

আমার জানামতে ডিপলেড ল্যাবরেটরীজ একটি পেটেন্ট ঔষধ বাজারজাত করে থাকে ” থুজা অক্সিডেন্টালিস 6X ” নামে, প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ১০-১২ ফোটা থুজা ড্রপ প্রতিবার আধাকাপ পানিতে মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার ২-৩ মাস সেবন করলে, পলিপাসে আরাম পাওয়া যায়। এভাবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে ৬-৮ ফোটা ও শিশুদের জন্য ৪-৬ ফোটা করে দিনে ৩-৪ বার সেবন করতে হয়। ডিপলেট ছাড়াও ম্যাক্সফেয়ার, নিউলাইফ হোমিও ল্যাব এসব কোম্পানিরও থাকতে পারে। আপনারা হোমিও ফার্মেসীতে খোঁজ করলে পাবেন। আশাকরি কাজে আসবে।

আরো পড়ুনঃ ধুমপান ছাড়ার উপায় বা ধূমপান থেকে মুক্তি

পলিপাস দূর করার সহজ উপায় –

পালিপাস থেকে সহজে আরোগ্য লাভ করার একটি উপায় আছে। যদিও এই ধরনের ঔষধ বাজারজাত হয় কিনা, আমার জানা নাই। তবে, আমি কয়েকজন ছোট ছোট কবিরাজদের দেখেছি, যারা এই লোশনটি বানিয়ে বিক্রি করেন।

ক্লোব অয়েল অর্থাৎ লবঙ্গের তেল, অয়েল সিনেমন অর্থাৎ দারুচিনির তেল, এবং অলিব অয়েল অর্থাৎ জয়তুনের তেল, এই লোশনের মুল উপাদান। ২ঃ২ঃ৬ অনুপাতে মিশ্রন তৈরী করে, কটন বাট বা তুলার সাহায্যে দিনে ২ বার পলিপে লাগালে, পলিপাস শিকড়সহ নস্ট হয়ে যায়। প্রথম দিকে একটু জালাপোড়া করতে পারে। পড়ে অভ্যাস হয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ ডায়বেটিস – হৃদরোগ ও ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমাতে বাঁশের কোড়ল খেতে পারেন! বাঁশ কিভাবে খাবেন?

পলিপাসের চিকিৎসায় কিছু প্রতারনা

একসময় দেখতাম, ইঞ্জেকশন এর মাধ্যমে চিকিৎসা করে, কিছু অসাধূ চিকিৎসক! এবং গ্যারান্টিও দেয়। আবার অনেকে স্যালিসাইলিক এসিড দিয়েও চিকিৎসা করে। এগুলো খুব ঝুকিঁপুর্ন ও বিপজ্জনক হতে পারে। এখান নাকে পচন ধরতে পারে। তাই এসব চিকিৎসা নেয়ার পুর্বে ভাল ডাক্তারের পরামর্শ বা অন্য কোন উপায়ে আরও জেনে নেয়া দরকার।

নাকের পলিপাসের ড্রপ এর নাম

নাকের পলিপাসের যে ড্রপ বাজারে এভেইলেবল আছে তার মধ্যে স্কয়ার ফার্মার এন্টাজল ০.৫% শিশুদের জন্য ১ % বড়দের জন্য। একমি ল্যাব এর ড্রপ এর নাম রাইনোজল, এরকম কয়েকটা কোম্পানি এসব ড্রপ বাজারজাত করে। এগুলো ব্যবহার করলেও সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। আফরিন নামক আরেকটি ড্রপ বাজারে আছে, অবশ্য এর স্প্রেও বাজারে খুব চাহিদা সম্পন্ন। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এসব ড্রপ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে, ধুলা-বালি মুক্ত, ঠান্ডা লাগা থেকে অবশ্যই নিজকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

হোমিওপ্যাথিক আরেকটি ড্রপ রাখতে হবে। তার নাম লেমনা মাইনর 6x এই ঔষধ নাকের পলিপাস বা মাংসবৃদ্ধি, নাক দিয়ে পানি পড়া, সর্দ্দিতে ভাল কাজ করে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০ ফোটা করে দিনে ৩ বার থুজা খাওয়ার ১-২ ঘন্টা ব্যবধানে খেলে ভাল উপকার হয়। যেমন থুজা6x যদি খাবারের ১ ঘন্টা আগে সেবন করেন, তাহলে লেমনা মাইনর6x খাবারের ১ ঘন্টা পরে খাবেন। এভাবে ২ মাস চালিয়ে যাবেন।

আরো পড়ুনঃ ঔষধ সেবনের সঠিক নিয়ম-কানুন! ঔষধ খাওয়ার দোষেও রোগ বাড়ে কমে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button