গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়
গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় জানার আগে রোগটা চিনে নিন। মুখ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত যে খাদ্যনালী ও অঙ্গগুলো আছে, তার একত্রিত সমন্বয়কে মানবদেহের পরিপাকতন্ত্র বলা হয়। একে পাচনতন্ত্রও বলে থাকে। এর কোথাও যদি কোন কারনে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। এগুলোকে পরিপাকতন্ত্র বা পাচনতন্ত্রের রোগের উপসর্গ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। নিন্মে তার বিস্তারিত বলার চেস্টা করছি।
গ্যাস্ট্রিক এর কারণে ক্ষুদাহীনতা (Loss of Appitite)
দীর্ঘদিন রোগে ভোগার পর, বা এন্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে ক্ষুধাহীনতা দেখা দিতে পারে। ক্ষয়রোগ, পাকস্থলীর ক্যান্সার, দুঃশ্চিন্তা, মানসিক অবদমন, সর্দি জ্বরের পরে বেশী inj. Saline নিলে, বা পেটে কৃমি থাকলেও ক্ষুদামান্দা দেখা দেয়। অত্যাধিক এসিডিটি থেকেও ক্ষুদাহীনতা দেখা দেয়। কাজেই চিকিৎসকের স্বরনাপন্ন হলে, এসবের কারন জানানোর চেষ্টা করতে হবে।
গ্যাস্ট্রিক থেকে বুকজ্বালা (Heartburn) :
অম্ল বা এসিড উপরের দিকে উঠে গেলে, বুক জ্বালাপোড়া করে, গলায় জ্বালা অনুভুব হয়। যাকে irritation বলা হয়। আবার রিফ্লাস ইসোফিগাটাইটিস এর জন্য বুকে স্টারনামের পেছনে জ্বালা যন্ত্রনা করে।
গ্যাস্ট্রিক এর পেটে ব্যথা (pain) :
অনেক ক্ষেত্রে পরিপাকতন্ত্রীয় রোগের উল্লেখযোগ্য উপসর্গ প্রকাশ পেলে ব্যথা হয়।
ব্যথার অবস্থান, কতক্ষন স্থায়ী হয়, হালকা না বেশী, কখন কখন হয়, খাবার পর বাড়ে না কমে এসব বিষয়ে চিকিৎসককে জানাতে হবে।
বমি (Vomiting) অথবা বমি ভাব ( Nausia) :
পাকান্ত্রিক গোলযোগের আরেকটা উপসর্গ, বমি অথবা বমি ভাব হতে পারে। যেমন – Intestinal Obstraction। আরও অনেক সমস্যার কারনেও বমি অথবা বমি ভাব হতে পারে। বমি হওয়ার অনেক কারনের মধ্যে মাইগ্রেন, মেনিনজাইটিস, শিশুদের সংক্রমন জনিত রোগে। High Fever এ, গর্ভধারনের প্রথম দিকে। দুশ্চিন্তা থেকেও হতে পারে, ডিওডিনাল ও পেপটিক আলসার থেকেও বমি হয়। তাই চিকিৎসকের কাছে খুব সতর্কতার সাথে হিস্টোরি জানাতে হবে।
পেট ফাঁপা ( Flatulance)
স্বাভাবিক অবস্থায় সামান্য পরিমান বায়ু, খাবার ও পানির সাথে পাকস্থলিতে প্রবেশ করে। এর মধ্যে কিছুটা ঢেকুর আকারে, বের হয়ে মুখ দিয়ে, অন্ত্রে চলে যায়। এবং কিছু গ্যাস মলদ্বার দেয়ে বের হয়। কিন্তু যদি মাঝে মধ্যেই যদি এমন টক ঢেকুর, বা ঘন ঘন দূর্গন্ধ যুক্ত বায়ু বের হয়, তাহলে পরিপাকতন্ত্র স্বাভাবিক নয় এটাই বুজতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য ( Coustipation ) :
কোষ্ঠকাঠিন্য কোন রোগ নয়। এটা অনেক রোগের লক্ষন প্রকাশ করে। নিয়মিত কোষ্ঠ পরিস্কারের পরিবর্তে, অনিয়মিত, বিলম্বে, ও শক্ত মলত্যাগকে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য বলে। বিভিন্ন কারনেই তা হয়ে থাকে। সাধারনতঃ লিভারের দুর্বলতা, কৃমি, অর্শ, বদহজম, ইত্যাদি কারনে কোষ্ঠ্যবদ্ধতা দেখা দেয়। যার ফলে আরও নতুন নতুন রোগের সৃস্টি করে। এমনকি পুরুষত্বহীনতা ও ক্যান্সারের মত জটিল রোগের কারনও হতে পারে।
বদহজম ( Dyspepsia ) :
পরিপাকতন্ত্র ও পাকস্থলির স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যহত হয়ে, যে অস্বস্থি তৈরী করে তাকে অজীর্ণ বা বদহজম ( Dyspepsia ) বলে। বুকজ্বালা করা, মুখে টক উঠা, পেট ভারী বোধ হওয়া, ঢেকুর তোলা, এসব বদহজমের লক্ষন। চিকিৎসকের কর্তব্য – রোগীর পাকস্থলী, পিত্তাশয়, হৃদপিন্ডের কোন অঙ্গে সমস্যা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা।
ডায়রিয়া ( Diarrhoea ) :
কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের মতই ডায়রিয়াও নিজে কোন রোগ নয়। এটাও অন্ত্রের ভিতর কোন গোলযোগ হলে, তা ডায়রিয়া আকারে প্রকাশ পায়। যেমন – আমরা অনেক সময় ফুড পয়েজনিং বলে থাকি এক প্রকার ডায়রিয়াকে। এগুলো সবই অন্ত্রের গোলযোগ। আর তা পরিপাকতন্ত্র গোত্রীয়।
ওজনহীনতা ( Loss of weight ) :
ক্ষুদামান্দা, বমি বা বমিভাব, অরুচি, কিংবা হজমতন্ত্রে ঘা এসবের জন্যই হতে পারে। পাকস্থলীর ক্যান্সারও ওজনহীনতার কারন হিসাবে ধরা যেতে পারে। কেউ কেউ আইবিএস কেও পাকস্থলীর মারত্মক সমস্যা হিসাবে চিন্হিত করেছেন। এর জন্যও ওজন কমে যেতে পারে। এগুলো সবই পরিপাকতন্ত্রীয় রোগ।
নিয়মিত পথ্য :
উপরের লক্ষনগুলো যার মধ্যে বিদ্যমান, তারা নিয়মিত ত্রিফলা ভেজানো পানি, অথবা ত্রিফলার চুর্ন টেবলেট খেতে পারেন। ইসুবগুল বা তার ভূষিও চমৎকার সহযোগী। কারমেনিটিভ ঔষধ, লক্ষন নির্মুল হবার আগ পর্যন্ত ২ মাস অবধি চালিয়ে যাওয়া উচিত।
সহজে হজম হয়না, এমন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিপাকতন্ত্র রোগের জন্য, গ্যাস্ট্রো-এন্টার্নোলজি ডাক্তারের স্বরনাপন্ন হতে হবে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
এ্যালোপ্যাথিকে সাধারণত ওমিপ্রাজল বা ইসোমিপ্রাজল ক্যাপসুল ২০ – ৪০ মিগ্রা রোগের তীব্রতা অনুযায়ী দৈনিক ২ বার খাবার ৩০ মিনিট আগে সেবন করতে হয় টানা ১ মাস। এর সাথে ডমপেরিডন ১০ – ২০ মিগ্রা দৈনিক ২-৩ বার এবং পেটে ব্যাথা থাকলে এ্যালজিন ৫০ মিগ্রা এর ১ টি ট্যাবলেট দিনে ৩ বার সেবন করা যাবে। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মিল্ক অব ম্যাগনেশিয়া সিরাপ রাতে ২-৩ চামচ খেতে হবে। অথবা কারমিনা সিরাপ ৩-৪ চামচ করে ৩ বার ১-২ মাস খাবেন।
রোগবালাই এর অন্যান্য লেখা পড়তে নিয়মিত সার্চ করবেন। আপনাদের জন্যই এসব আয়োজন। আবার আসবেন।
ঔষধ পরিচিতি দেখুন কোন ঔষধ কি কাজ করে