পুরুষের যৌন সমস্যার কারন ও কার্যকরী স্থায়ী চিকিৎসা
পুরুষের যৌন সমস্যা বলতে বুঝানো হয় খুব তাড়াতাড়ি বীর্যস্খলন হওয়া। অর্থাৎ ১ মিনিটেরও কম সময় পর্যন্ত মিলনে অক্ষম হলেই তাকে সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। যা একজন যৌন সঙ্গিনীর জন্য অপর্যাপ্ত এবং অতৃপ্তিকর। এটা অবশ্যই একটি ব্যাধি বা পুরুষত্বহীনতা, যার চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
গবেষণায় জানা যায় শুধু পুরুষই নয়, সংখ্যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরাও যৌন সমস্যায় ভুগছেন। শতকরা হারে ৪২ শতাংশ নারী ও ৩১ শতাংশ পুরুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত। তবে নারীদের সমস্যা বুঝতে না পারলেও পুরুষদের সমস্যা দৃশ্যমান হয়। তাই প্রত্যেক পুরুষরাই মনে করেন হয়ত এটা শুধু পুরুষদেরই হয়ে থাকে।
পুরুষদের যৌন সমস্যার কারন কি
পুরুষদের যৌন সমস্যার কারন অনেক হতে পারে, পরিক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া সুনির্দিষ্ট করে প্রকৃত কারন বের করা কঠিন। তবে কয়েকটি কারন এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যদি এসবের কোন একটি আপনার থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা করে নিবেন।
- অতিরিক্ত দূশ্চিন্তা বা হতাশা যৌন সমস্যার কারন হতে পারে।
- অতিরিক্ত ধূমপান অর্থাৎ দৈনিক ২০ টি সিগারেটের বেশি যারা ধূমপান করেন, তাদের যৌন সমস্যা হতে পারে।
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস থেকে যৌনাকাঙ্ক্ষা কমে যেতে পারে ।
- দীর্ঘদিনের স্নায়ুবিক দুর্বলতা ও রক্তস্বল্পতা থেকেও যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ সেবনের কুফল হিসাবে সাময়িক যৌন সমস্যা হতে পারে।
- অনেক সময় অতিরিক্ত শারিরীক ও চাপের কারনে যৌন সমস্যা দেখা দেয়।
- অতীতের কোন ঘটনা বা সেক্সুয়্যাল ট্রমার হলে দাম্পত্য জীবনে সমস্যা দেখা দেয়।
যৌন সমস্যা বুঝার উপায় কি
- পুরুষদের যৌন সমস্যা বুঝার উপায় হলো- মিলনের সময় খুব তারাতারি বীর্যপাত হওয়া যাকে অকাল বীর্যপাত বলা হয়।
- সহবাসের প্রতি তেমন কোন ইচ্ছা না থাকা, বা একদিন মিলন করলেই দুই থেকে তিনদিন আর মিলনের ইচ্ছা না হওয়া।
- প্রথমদিকে যৌনাকাংখা হলেও কিছুক্ষনের মধ্যে আবার লিঙ্গ নেতিয়ে যাওয়া।
কারো কারো ক্ষেত্রে পেনিয়েন্ট্রেশনের আগেই বীর্যপাত হয়ে যায়।
যৌন সমস্যায় সচেতনতা কি
যৌন সমস্যায় সচেতনতা বলতে যা বুঝানো হয় তা হলো-
- কিছু কুসংস্কার এড়িয়ে চলা,
- যৌন স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া,
- নীলছবি দেখার অভ্যাস পরিত্যাগ করা,
- অতিরিক্ত ধূমপান থেকে নিজকে গুটিয়ে নেয়া,
- দূসচিন্তা বা হতশাগ্রস্থ না হওয়া,
- পূর্বের কোন ঘটনার সাথে নিজকে অপরাধী না ভাবা,
- মিলনের সময় পরনারী ভাবনা দূর করে রাখা,
- নিজ সংগিনীকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা,
- সঙ্গিনীর প্রতি সন্দেহ দূর করা,
- সংগীনীকে প্রচন্ডভাবে উত্তেজিত করা,
- মিলনের সময় ছাড়াও সঙ্গিনীকে কাছে পেলে আদর করা।
- ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা।
পুরুষের যৌন সমস্যার চিকিৎসা/সমাধান কি
পুরুষের যৌন সমস্যার চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হলে যেসকল বিষয় জানতে হবে তা হলো- যৌন সমস্যার কারন, লক্ষন ও উপসর্গ বিবেচনা করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। আমি কয়েকটি পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করছি-
অকাল বীর্যপাতের চিকিৎসা
অকাল বীর্যপাত বলতে পেনিয়েট্রেশনের সাথে সাথে বীর্যপাতকে অকাল বীর্যপাত বলে। এর জন্য রোগীকে মানসিক চাপ কমাতে হবে, হতাশা দূর করে সর্বদা আশাবাদী থাকার চেষ্টা করতে হবে। ভাল একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে কিছুদিন নিয়মিত ঔষধ সেবন করলে,আশা করা যায় অকাল বীর্যপাত রোধ হবে।
লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যার চিকিৎসা
লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যায় চিকিৎসা নেয়া একটু জটিল, এক্ষেত্রে অনেক পরিক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। এই সমস্যাকে ইরেক্টাল ডিস্ফাংশন বলা হয়। যা ডায়গনসিস করতে কিছু টেষ্টের প্রয়োজন হতে পারে।
যদি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মনে করেন যে, রোগীর শারীরিক কোন ঘাটতির কারনে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে, তাহলে ঐ ঘাটতি পুরনের জন্য পর্যাপ্ত ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবারের পরামর্শ দিবেন। কারন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দীর্ঘদিনের পুষ্টিহীনতায় ইরেক্টাল ডিশফাংশন হতে পারে। পর্যাপ্ত ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবারে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
আর যদি শারীরিক কোন সমস্যার জন্য অথবা কোন দূরারোগ্য ব্যাধির প্রভাবে ইরেক্টাল ডিসফাংশন হয়, তাহলে কয়েকটি টেষ্টের রিপোর্ট দেখে এর উপর চিকিৎসা দিতে হবে। এখানে যেসকল কারনে এই সমস্যা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো- একনাগাড়ে বহুদিন এন্টিবায়োটিক সেবন এবং কোন একটি ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
পুরুষের যৌন সমস্যার হারবাল চিকিৎসা
যৌন উত্তেজনা কমে যাওয়া বা লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যা চিকিৎসার মাধ্যমে সাড়িয়ে তুলা যাতসা এসব চিকিৎসার কয়েকটি ধারা আছে, তার মধ্যে এ্যালোপ্যাথিক, হোমিও, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা অন্যতম। রোগী যদি চায়, যেকোন মাধ্যমে তিনি চিকিৎসা নিতে পারবেন।
এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় পুরুষের যৌন সমস্যার সমাধান হয়, তবে অনেক সময় সঠিক পরীক্ষা করতে ব্যর্থ হলে- চিকিৎসায়ও ব্যর্থ হতে হয়।
ভেষজ চিকিৎসায় পুরুষের যৌন সমস্যার সমাধান
আমাদের দেশে প্রচলিত চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম চিকিৎসা হলো- যৌন সমস্যায় ভেষজ চিকিৎসা, যা যুগ যুগ ধরে সাধারন রোগীদের আস্থা অর্জন করে আসছে। এক সময় ভারতীয় উপমহাদেশে যৌন সমস্যার চিকিৎসা বলতে ভেষজ চিকিৎসাকেই বুঝানো হতো। এখনো দেশের ৬০ শতাংশ রোগী এই চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল। যদিও আমাদের দেশে এখন সঠিক ভেষজ চিকিৎসক পাওয়া দূষ্কর হয়ে পড়েছে, এর মাঝেও কিছু কবিরাজের খোঁজ পাওয়া যায়, যারা সঠিক ভেষজ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
যৌন সমস্যা প্রতিরোধে যা করবেন
যৌন সমস্যা থাকুক আর না ই থাকুক যৌন স্বাস্থের প্রতি সব সময় যত্নশীল হতে হবে। প্রচুর জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, উপরে যে সকল পরামর্শ দেয়া হয়েছে তা অনুসরণ করতে হবে। যখনই কোন সমস্যা মনে হবে, তখনি একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্টে বলবেন।