হার্ট এটাক হলে কি করবেন? কিভাবে হার্ট এটাক এড়ানো সম্ভব
হার্ট অ্যাটাক সত্যিই একটি বিশেষ রোগ। এই রোগটি আসলে সবার মধ্যে খুব ভীতি সঞ্চার করে থাকে। এর কারণ হলো হার্ট অ্যাটাক রোগে যারা মৃত্যুবরণ করে, তাঁদের বেশির ভাগ লোকই কিন্তু প্রথম ঘণ্টার মধ্যে মারা যান। হার্ট এটাক হলে কি করবেন?
তাই হার্ট অ্যাটাক সম্বন্ধে আমাদের একটি ব্যক্তিগত ধারণা থাকা দরকার। এর কারণ হলো, হার্ট অ্যাটাক যেই রোগীর হয় তাঁকে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে, রোগীর পাশে যাঁরা থাকেন। তাঁদের কিছু বিষয় জেনে রাখা দরকার। এবং তাঁদের কিছু দায়িত্ব থাকে।
আমরা সবাই জানি, হার্ট আমাদের সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালন করে পাম্পের মাধ্যমে। যেহেতু হার্ট নিজে একটি পাম্প, তাকে কাজ করতে হয়। তাই তার নিজস্ব একটি রক্ত চলাচলের পদ্ধতি রয়েছে, রক্তনালি আছে। এই রক্তনালিগুলো মধ্যে কোনো একটি বা একের অধিক নালি যদি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে হার্টের বেশ কিছু অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে গেলে হার্টের কাজ করার ক্ষমতাও বন্ধ হয়ে যায়। এটিই হলো হার্ট অ্যাটাক।
হার্টএ্যাটাক এর উপসর্গ
সাধারণত বুকে ব্যথা হওয়াটা সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণ। হঠাৎ করে বুকটা ভীষণ চেপে ধরে। মনে হয় বুকটি ভেঙ্গে পড়ল। অনেক ওজন চেপে গেছে। এটা হয় শুরুতে এবং এর সাথে সাথে অনেকের শরীরে ঘাম হতে থাকে। পাশাপাশি অনেক সময় মাথা ঘুরতে থাকে, বমি হতে থাকে। আবার বমি নাও হতে পারে। তবে বুকে ব্যথা হওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাম হাতে ব্যাথাও হতে পারে। ভয় ভয় লাগতে পারে তখন, ঘারে কণ্ঠনালী ফুলেও যেতে পারে। এগুলোই তার প্রধান উপসর্গ।
হার্ট এ্যাটাক এ সতর্কতা
ধূমপান বন্ধ করা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, ফল খাওয়া, সুগার, রক্তচাপ পরিক্ষা করা। কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। হার্ট দূর্বল এমন ব্যাক্তিগন শীতের প্রভাবমুক্ত থাকা অত্যান্ত জরুরী। দূশ্চিন্তা, অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়া, নিদ্রাহীনতা, মদ্যপান এগুলো হার্টএটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
তাই সঠিক নিয়ম মেনে চললে হার্টের অসুখ হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমানো যায়। যাদের বংশগত হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা রয়েছে, তাঁদের নিয়মিত হার্টের চেকআপ করানো খুব জরুরি। কারণ, বংশগত হার্টের অসুখও অন্যতম ভয়ের কারণ। ওজন বেশি থাকলে কমান। জীবনযাত্রার এই কয়েকটা পরিবর্তন করলেই রক্তচাপ খানিকটা কমবে, হার্ট সুস্থ থাকবে। সাম্প্রতিক ‘হাইপার টেনশন গাইডলাইন্স’ অনুযায়ী রক্তচাপের ঊর্ধসীমা ১৪০/৯০ থেকে পরিবর্তিত হয়ে ১৩০/৮০ হয়েছে। যাঁদের রক্তচাপ এর বেশি, তাঁরা জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে, বা চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খেয়ে নিজের হার্টকে সুস্থ রাখুন।
হার্ট এটাক হলে কি করবেন?
সাথে সাথে হাসপাতালে নিতে হবে, যত দ্রুত সম্ভব। ৩-৫ মিনিটের মধ্যেই সিপিআর শুরু করতে হবে। এবং তা হসপিটালে নেয়ার আগ পর্যন্ত কয়েকবার করতে হবে। হৈ হুল্লোড় করলে রোগীর অবস্থা আরও জটিল হতে পারে। তাই সতর্কতার সাথে দেরী না করে যত দ্রুত হাসপাতালে নেয়া যায়, ততই ভাল। হাসপাতাল বেশী দূর হলে, রোগীকে ৩০০ মিলিগ্রাম এসপিরিন খাওয়ানো যেতে পারে। ব্যাথা কমে যাবে হাসপাতাল পৌছা পর্যন্ত হয়ত ততটা বাড়বেনা। এবং পরবর্তীতে ডাক্তারকে এসপিরিনের কথা বলতে হবে। চিকিৎসা করে বাড়িতে যাওয়ার পরও অনেকে ভুল করেন। ভাল হয়ে গেছে মনে করে, ঔষধ সেবন বন্ধ করে দেন। তাই কিছুদিন পর আবার হার্ট এটাক হয়।
এটা করবেননা, কারন একবার যদি হার্ট এটাক হয়েই যায়, তাহলে ডাক্তার নিষেধ করার আগ পর্যন্ত কোন ঔষধই খাওয়া বন্ধ করা যাবেনা। এমনকি একটি স্প্রে দিতে পারে, রক্তনালীকে প্রসারিত করার জন্য, এটা সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে। চিকিৎসা চলা অবস্থায়ও কোন কারনে আবারও হার্ট এটাক হতে পারে। তখনি জীবন বাঁচাতে এই “নাইট্রোগ্লিসারিন” স্প্রে কাজে লাগবে।
নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে বিভিন্ন কোম্পানী বিভিন্ন নামে বাজারজাত করে। হার্ট এটাক হয়েছে মনে হলেই জিহ্বার নিচে ২ চাপ স্প্রে করলে, ধমনির প্রসারতা আসে। যার কারনে, পাম্পিং স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ততক্ষনে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের নিকট প্রায় নিশ্চিন্তে পৌছা যায়। অনেকে আবার ভাবেন, চিকিৎসা যখন চলছে, খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজন কি? তাদের জন্য বিপদ আছে! তাই চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনকেও বদলাতে হবে।
আর যাদের হার্টে সমস্যা আছে, কিন্তু এখনো হার্ট এটাক হয়নি। তারা আগে থেকেই সতর্ক থাকলে, হার্ট এটাক এড়ানো অনেকটা সম্ভব।
আরও পড়ুন – লিভার ভাল রাখার উপায় | জন্ডিস থেকে মুক্তির উপায়