রোগ নির্নয়স্বাস্থ্য টিপস

চোখের বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার

চোখের বিভিন্ন অংশে নানাবিদ সমস্যাকে চক্ষুরোগ বলে থাকে। যেমন – চোখের ছানি, দৃষ্টিশক্তির দূর্বলতা, গ্লকোমা, ডায়বেটিক জনিত রেটিনোপ্যাথি, কনজাটিভাইটিস, ট্যারা চোখ, চোখের শুষ্কতা, দৃস্টিশক্তি চলে যাওয়া, চোখে আঘাত, ইরিটাইটিস, stye, ইত্যাদি। এ সমস্থ বিষয়ের উপর কিছু জ্ঞান বিতরনের উদ্দেশ্যে আজকের আয়োজন চোখের বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার।

চোখে আঘাত পাওয়া :

কোন কিছুর মাধ্যমে চোখে আঘাত পেলে, বা খোচা লাগলে, চোখে প্রদাহ হতে পারে। পরে এতে তীব্র ব্যাথা অনুভুত হয়। আঘাতের পরিমান বেশী হলে, চোখ খুলতে অসুবিদা হতে পারে। চোখ ফুলে যায় সাথে চোখে রক্ত জমাটও হতে পারে। সাথে সাথে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না দেখালে অন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে ক্লোরামফেনিকল ড্রপ ২ ফোঁটা করে ৩ বার। এবং এমক্সিসিলিন ক্যাপসুল ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দৈনিক ৩ বার। ও ব্যাথার জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। ৩-৪ দিন পর্যবেক্ষন করে, সুনির্দিস্ট ফলাফল না পেলে, চক্ষু হাসপাতালে যেতে হবে।

আরও পড়ুন : করোনা ভ্যাকসিন শরীরে কিভাবে কাজ করে।

চোখ উঠা (conjunctivities) :

কনজাংটিভা স্কেলেরা ও কর্ণিয়ায় কোনভাবে জীবাণুদ্বারা প্রদাহ হলে, এলার্জি, ধূলিকণা, আঘাত, ধোয়া, ঠান্ডা বাতাস। বা যেকোন কারনে কনজাংটিভার রক্তবাহী নালিগুলোতে প্রদাহ হয়। তাকে চোখ উঠা বলা হয়। এটা ভাইরাস ঘটিত সংক্রমক রোগ। অনেক সময় মহামারী আকারে প্রকাশ পায়।

প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে নরমাল স্যালাইনের পানি দিয়ে চোখ ধূতে পারেন। ক্লোরামফেনিকল মলম খুব ভাল কাজ করে। প্রথম দিকে এটা ব্যাবহার করতে পারেন। রোগ তীব্র হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তীব্র না হলে, সিটিরিজিন ট্যাবলেট রোজ ১ টা ৫ দিন। ব্যাথার জন্য প্যারাসিটামল দিনে ৩ বার, ব্যাথা কমলে বন্ধ। এবং কোন অবস্থাতেই হাত দিয়ে চোখ চুলকানো যাবেনা। এতে ইনফেকশন হয়ে মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে।

কেরাটাইটিস বা চোখে ফুল পড়া :

সাধারনতঃ চোখের কর্ণিয়ায় ঘা হলে, ঐ স্থানে সাদা দেখায়। এবং তাকে চোখে ফুল পড়া বলে ডাকা হয়। এটা সাধারনতঃ ২ ভাবে হয় – ঘা যুক্ত প্রদাহ ও ঘা বিহীন প্রদাহ।
অনেক সময় চোখ উঠা থেকেও কর্ণিয়ায় প্রদাহ দেখা দিতে পারে। স্টেফাইলোক্কাস ও নিউমোক্কাস জীবাণু দ্বারাও ঘা হয়। ধুলাবালি থেকে ঘা এর সৃস্টি হতে পারে। পরে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রদাহ হতে পারে। এছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সর্দিজ্বর সহ বিভিন্ন রোগের সময় চোখ উঠা দেখা দেয়। এবং কর্ণিয়া জীবাণুদ্বারা প্রদাহ হয়ে ঘা সৃস্টি করে। এটা থেকেও ফুল পড়তে পারে। ভিটামিন এ র অভাবেও এরোগ দেখা দিতে পারে।
এই রোগের জন্য জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতি র চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে ভালো হয়।

তারামন্ডল বা iritis :

চক্ষু তারকার চতুর্পার্শ্বে বর্নমন্ডলকে তারামন্ডল বা iritis বলে। বাত, প্রদাহ, আঘাত, জীবাণু বা ভাইরাসসহ নানা কারনে এ অংশে প্রদাহ হয়।
এতে দৃস্টিশক্তি কমে যায়। যেকোন আলো অস্বস্থিকর মনে হয়। চোখ বুঝলে যন্ত্রনা অনুভুত হয়। রগগুলো সুঁচের মত মনে হয়, এবং কস্টকর অনুভুত হয়। চোখে চুলকায়।
এ রোগের জন্যও চক্ষু ডাক্তার দেখাতে হবে।

আরও পড়ুন : লিভার ভাল রাখার উপায় | সুস্থ্যতার জন্য পড়ুন।

চোখের ছানি :

বয়স চল্লিশোর্ধ হলে, এ রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দেশে অন্ধত্বের সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারন হতে পারে চোখে ছানি পড়া। প্রথম দিকে অপারেশন করিয়ে নিলে পুরোপুরি সুস্থ্যতা পাওয়া যায়। বেশী তীব্র হলে সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই চোখে ছানি পড়া সন্দেহ হলেই, সাথে সাথে অপারেশন করিয়ে নিতে হবে। এর জন্য চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

গ্লুকোমা (glucoma) :

গ্লুকোমা হলে চোখের চাপ বেড়ে যায়। এবং অপটিক নার্ভের উপর চাপ পড়ে ও নার্ভটি নস্ট হয়ে যায়। ফলে দৃস্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যায় ও অন্ধত্ব দেখা দেয়। এতে চোখ লাল হয়। চোখের চার পাশে বিভিন্ন রং দেখতে পায়। চোখ ফুলে যায় ও ব্যাথা হয়। চোখের ভিতরের সরু রক্তজালিকাগুলো মোটা হয় এবং ফুলে যায়।

প্রথম দিকে চিকিৎসা করালে গ্লুকোমা ভাল হয়ে যায়। অবহেলায় চিকিৎসা নিতে দেরী হলে, অন্ধ হয়ে যাবার আশংখা আছে।
গ্লুকোমা সাধারনতঃ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের কারনে হতে পারে। অতিরিক্ত রক্তস্বল্পতা থেকেও হতে পারে। অপুষ্টিজনিত স্নায়ুবিক রোগ থেকেও গ্লুকোমা হতে পারে। ক্রনিক ডিসেন্টির চিকিৎসা না করালেও এরোগ হতে পারে।

ডায়বেটিস জনিত রেটিনোপ্যাথি :

ডায়বেটিস রোগীর রক্তে বেশী পরিমানে গ্লকোজ থাকে। এর ফলে চোখের রেটিনাতে এক ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। ডায়বেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন না করলে এরোগের প্রকাশ ঘটে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেন টিউমার, গণোরিয়া, সিফিলিস, থেকেও রেটিনার পরিবর্তন, আইরাইটিস, অপটিক এট্রপিসহ চোখের বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। তাই কোন রোগকে অবহেলা না করে, বা চিকিৎসার জন্য লম্বা দিন তারিখ না নিয়ে। রোগ প্রকাশের সাথে সাথে চিকিৎসা নেয়া উচিত। কারন একটি রোগ থেকে আরেকটি রোগের সৃস্টি হতে পারে। আজকের মোড়াল অব আর্টিক্যাল এটাই। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না নিলে, এটা থেকে আরেকটা রোগের সৃস্টি হতে পারে। সেই সাথে পুর্বের রোগও জটিলতা ধারন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X