রোগ নির্নয়স্বাস্থ্য টিপসহারবাল

ডায়রিয়া বা পাতলা পয়খানার ঔষধ কি | খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন।

ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। এতে শরীরে পানিশুন্যতা দেখা দিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এ নিয়ে কোন ভয় নেই। অথচ ডায়রিয়া খুব মারাত্মক একটি রোগ! এই রোগে মাত্র কয়েকবার মলত্যাগ হলেই শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পরে। এক পর্যায়ে শয্যাশায়ী হয়ে পরতে হয়। জানিয়ে দিবো ডায়রিয়া থেকে মুক্তির উপায় কি

ডায়রিয়া কেন হয়? পাতলা পায়খানার কারন কি

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কয়েকটি কারনের মধ্যে একটি হলো- অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, দূষিত পানি বা খাবার, ফুড পয়েজনিং ইত্যাদি কারনে ডায়রিয়া হতে পারে। তাই বিশুদ্ধ পানি, পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নতা ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। আর ফুড পয়িজনিং থেকে বাঁচার জন্য কয়েকটি উপায় থাকলেও অধিকাংশ কারনই নিজের অজান্তে হতে পারে। আবহাওয়াজনিত কারনেও অনেক সময় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।

ডায়রিয়ার চিকিৎসা কি

ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে, সর্বপ্রথম ওরাল স্যালাইন ই সঠিক চিকিৎসা। তবে অনেক সময়ই স্যালাইনে সুস্থ্য করে তুলতে পারেনা। তাই প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য স্যালাইনের সাথে মেট্রোনিডাজল ৪০০ মিগ্রা ট্যাবলেট ৮ ঘন্টা পর পর ৩-৫ দিন সেবন করতে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে সিরাপ আধা চামচ থেকে ১ চামচ পরিমান দিনে ৩ বার দেয়া যায়। ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য মেট্রোনিডাজল সিরাপ সেবন না করাই ভাল। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন –

এরপরও যদি ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে সিপ্রোফ্লক্সাসিন ৫০০ ট্যাবলেট দিনে ২ বার ৫-৭ দিন অথবা এ্যাজিথ্রোমাইসিন ৫০০ মিগ্রা ট্যাবলেট প্রথমদিন একসাথে ২ টি এবং এরপর থেকে প্রতি ২৪ ঘন্টা পর পর ১ টি ট্যাবলেট ৫ পর্যন্ত খেতে হবে। সাথে নিটাজক্সানাইট ৫০০ মিগ্রা ট্যাবলেট দিনে ২ বার ৩-৫ দিন শিশুদের জন্য সাসপেনশন তৈরীর পাউডার পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন – টিউমারের ঔষধ কি

শিশুদের ডায়রিয়ার ঔষধ কি শিশুদের ডায়রিয়া হলে বয়স অনুযায়ী অর্থাৎ ১ বছরের কম হলে ৬ মাসের বেশি যদি হয়, খবার স্যালাইন এর পাশাপাশি ইউনানি একটি ঔষধ আছে শরবত বেলগিরী নামে। ১ চামচ করে ৩ বার খাওয়াতে হবে। অনেক ভাল কাজ করবে এই ঔষধটি। ডিপলেট নামক একটি কোম্পানির এডাড নামের ঔষধটি দিয়ে অনেক গুরুতর ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা করেছি, এবং সফলও হয়ছি।

অনেক ক্ষেত্রে এ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রয়োজন হতে পারে, তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে শুধু বেলগিরী দিয়েই সুস্থ করা যায়। বেলগিরি সিরাপ হামদর্দ এর মারবেলাস, ডিপলেড এর এডাড সহ অনেক ভাল ইউনানি কোম্পানি শুধু বেলগিরি নাম দিয়েই করে থাকে। এটা কুরচি ও বেলের শুঠ দিয়ে তৈরী হয়। তাই জেনেরিক নামটা বেলগিরি।

আরও পড়ুন – ডাইক্লিজ প্লাস কিসের ঔষধ

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার এন্টিবায়োটিক

৬ মাসের কম বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে, মায়ের দূধ খাওয়ার বিকল্প নাই। এরপরও যদি না কমে, তাহলে এ্যারিথ্রোমাইসিন ড্রপ ৫০ মিগ্রা (১.২৫ মিলি) থেকে বয়স ও ওজন অনুযায়ী মাত্রা বাড়িয়ে দৈনিক ৪ বার সেবন করা যায়। এভাবে ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে। এ্যারিথ্রোমাইসিন এর এরোমাইসিন বা এ মাইসিন যেকোন একটি হলেই হবে। সবগুলোই ভাল ঔষধ।

একিউট ডায়রিয়ার ঔষধ কি

একিউট ডায়রিয়ার আরো কিছু ঔষধের নাম বলে দেয়া উচিত। যেমন রিফাক্সিমিন ২০০ মিগ্রা ট্যাবলেট। একিউট ও ক্রনিক দুই অবস্থাতেই ভাল কাজ করে। একটা করে দিনে ৩ বার সেবন করতে হয় ৫-৭ দিন পর্যন্ত। ক্রনিক হলে ২০০-৪০০ মিগ্রা ট্যাবলেট দিনে ৩ বার ৭ – ১৪ দিন পর্যন্ত সেবন করা যায়।

ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার ঔষধ কি

ক্রনিক ডায়রিয়ার অনেকগুলো কারন থাকে। বেশীরভাগ হতে পারে আইবিএস ( IBS) ইরিটেবল ভাওয়েল সিনড্রোম। যদি IBS থেকে হয় – তাহলে এটা সেটা না খেয়ে আমার উপদেশ হবে, আয়ুর্বেদিক ঔষধ কুটজারিষ্ট সিরাপ বয়স ও লক্ষনভেদে ২-৪ চামচ করে দিনে ৩ বার, এভাবে ২-৩ মাস পর্যন্ত ঔষধ খেতে হবে। ইউনানি সিরাপ বেলগিরীও এখানে ভাল কাজ করে। কুটজারিষ্ট না পেলে বেলগিরী একই নিয়মে চালিয়ে যেতে পারেন।

ডায়রিয়ার সিরাপ এর নাম কি

আমার জনামতে সেতু ড্রাগ এর কুটজারিষ্ট সিরাপটি চমৎকার কাজ করে। স্কয়ার হারবালসহ অনেক আয়ুর্বেদিক কোম্পানি কুটজারিষ্ট বাজারজাত করে। ফেনী দাওয়াখানার এমোডাই নামে কুটজারিষ্ট ঔষধও মোটামুটি কাজ করে। আমি সেতুর ঔষধটি না পেয়ে কয়েকজন রোগীকে আইবিএস এর জন্য দিয়েছিলাম। অধিকাংশ রোগীই ৩ মাসের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন। তবে এর সাথে ইসুবগুল বা তার ভুষি সকাল ও রাতে ১-২ চামচ ১ গ্লাস পানির সাথে গুলে খেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X