দাঁত ব্যথা ও দাতেঁর ক্ষয়রোগ | প্রতিরোধ ও প্রতিকার জেনে নিন
কথায় আছে, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম জানতে হয়। না হলে পরে আফসোস করতে হয়। কারন, দাঁত যদি সুস্থ্য না থাকে, তাহলে খাদ্যের কোন মজাই থাকেনা। সুন্দরভাবে না চিবাতে পারলে, খাবেন ই বা কি! আর দাতের ব্যথা যার হয়, সে ই জানে – তা কতটা কস্টকর! আর এর জন্যই দাঁত ব্যথা বা দাঁতের ক্ষয়রোগ সম্পর্কে জানা খুব দরকার।
দাঁত ব্যথা :
ঋতু পরিবর্তন, ঠান্ডা লাগা, দাঁতে পোকা, এনামেল নস্ট হওয়া, ইত্যাদি কারনে দাঁতে ব্যথা হয়। শারীরিক দূর্বলতা, ও ক্যালসিয়ামের অভাব থেকেও ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও দাঁত অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন রাখার দায়ে গোড়া ফুলে, পেকে পুঁজের সঞ্চার হয়। ইহা দাঁতের গোড়া পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে, সেখানে অনেক সময় ফোড়াও হতে পারে। এই পুজ বের করতে না পারলে, চোয়ালে এবং হাড়ের মারাত্মক ক্ষতিও হতে পারে। নড়া দাঁত থেকেও ব্যথা হয়। আক্রান্ত দাঁতের চিকিৎসা না করলে, সুস্থ্য দাঁতও আক্রান্ত হতে পারে।
দাঁতের ক্ষয়রোগ :
দন্তক্ষয় বা দাঁতের ক্ষয়রোগ একটি জীবানুজনিত রোগ। শর্করা বা চিনি জাতীয় খাবারের সাথে এই রোগের সম্পর্ক পাওয়া যায়। এজাতীয় খাবারের পর দাঁত পরিস্কার না করায়, বিভিন্ন জীবানু বংশ বিস্তার করে। এসব জীবানুর মধ্যে এসিড প্রস্তুতকারী জীবানুগুলো তাদের সৃস্ট এসিডের সাহায্যে দাঁতের এনামেল ও ডেন্টিনের ক্ষয় তৈরী করে।
এভাবে জীবানুজনিত কারনে, দাঁতে ক্ষত সৃস্টি করে একপ্রকার গর্ত তৈরী করে। এসব গর্তকে কেবিজ বা দন্তক্ষয় বলে। এসব গর্তে সহজেই খাদ্যকণা জমে, গর্তটি ক্রমান্বয়ে বড় হতে থাকে। এভাবেই ক্ষতটি এনামেল হয়ে ডেন্টিনে প্রসারিত হয়। এবং ঠান্ডা বা গরম পানি গ্রহনের সময় দাঁতে শিরশির বা সেনসিটিভিটি হয়। চিকিৎসা না করলে একধরনের ঘায়ে পরিনত হতে পারে।
প্রধান জীবানু :
কেরিজের প্রধান জীবাণু স্ট্রেপটোক্কাস (Streptococcus) ও ল্যাকটোবেসিলাস ( lacto bacillus)। অনেকে একে দাঁতে পোকা ধরাও বলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দাঁতে পোকার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আগেকার বেদেঁ সম্প্রদায়ের লোকেরা গ্রামে গঞ্জে ঝাঁড়ফুক দিতেও অনেকে দেখেছেন। আসলে এসবের কোন ভিত্তি নাই। সাধারনতঃ বিভিন্ন জীবানু প্রলেপ ডেন্টাল প্লাগ বা ব্যাকটেরিয়াল প্লাগ মুখে অবস্থান করে। খাবারের পর ভালভাবে মুখ পরিস্কার না করার ফলে এসব জীবানু খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে, লক্ষ থেকে কোটিতে পৌছায়।
দাঁতের চিকিৎসা :
দাঁতের যেকোন সমস্যার জন্য BDS ডাক্তারের স্বরনাপন্ন হতে হবে। একসময় আমরা দেখতে পেতাম বাজারে গলিতে একধরনে হাতুরে ডাক্তার বাক্স নিয়ে বসতো।
এরা দাঁতের কিছু সেম্পল নিয়েও সাজিয়ে রাখতো। সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, এসব হাতুরেদের এখন আর তেমন দেখা যায়না। দাঁত অতি মুল্যবান একটি অঙ্গ! তাই এর অপচিকিৎসা যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পথ্য ও ঘরোয়া চিকিৎসা :
প্রত্যেহ খাবারের পর, মুখের ভেতর পরিস্কার রাখতে হবে। অন্ততঃ ভালভাবে কুলকুচি করে নিতে হবে।
দিনে ২ বার সকালে ও রাতে, খাবার পর ব্রাশ করতে হবে। তবে প্রত্যেকবার সর্বোচ্চ ২ মিনিটের বেশী ব্রাশ করা উচিত নয়।
সাধারন অনেক টুথপেস্টে অতিরিক্ত ক্যামিক্যাল (ফ্লুরাইড) থাকায়, দাঁতের উপকারের চেয়ে ক্ষতিও হয়। ক্যান্সার ঝুঁকির কারনে, এসব নিয়ে যাচাই করাটাও এখন জরুরী।
প্রতি রাতে সামান্য এলাচির গুড়া মুখে নিয়ে, কিছুক্ষন রাখবেন। এটাও জীবানু নস্ট করার একটা কৌশল।
ঘুমানোর আগে জীবাণুনাশক মাউথওয়াশ দিয়ে গারগল করে নিতে পারেন।
মাঝে মধ্যে আইচ ফুল মুখে নিয়ে, আঙ্গুলের সাহায্যে ঘষে নিতে পারেন। এতে দাতের ব্যথায় উপশম হয়। অন্যান্য লেখা পড়তে চাইলে, রোগবালাই লেখার উপরে ক্লিক করে, বিষয় পছন্দ করুন।