ফুসফুসে ক্যান্সার কি কেনো হয়? প্রতিরোধ ও সচেতনতা সম্পর্কে জানুন
ফুসফুসে ক্যান্সার একটি মারাত্মক ব্যাধি। এটি প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা বেশ কঠিন। কারণ অন্যান্য ক্যান্সার শনাক্তকরণে যে স্ক্রিনিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তা ফুসফুসে ক্যান্সারের (Lungs Cancer) ক্ষেত্রে ততটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে না। তবে প্রথম অবস্থায় (First stage) এই ক্যান্সার শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না নিলে, পরবর্তী (last stage) সময়ে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
ধুমপান অন্যতম কারন :
যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০টি সিগারেট বা বিড়ি সেবন করে তার ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অধূমপায়ীদের থেকে ২০ গুণ বেশি। পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবেও রোগ হতে পারে। ক্যান্সার আক্রান্ত মৃত্যুর মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ মৃত্যু ফুসফুসের ক্যান্সারজনিত কারণে।
সুতরাং কেবলমাত্র তামাকের ব্যবহার ছেড়ে দিলেই এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তামাকের ধোঁয়া শ্বাসনালির অভ্যন্তরীণ দেয়ালের ক্ষত সৃষ্টি করে যার ফলে কোষের আকৃতির অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তন পরবর্তীকালে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়ায় ক্যান্সার সৃষ্টির অনেক রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান।
তাছাড়া আর্সেনিক, রঞ্জন রশ্মি বিকিরণ, এসবেস্টস, ক্রোমিয়াম যৌগ, আলকাতরা জাতীয় সামগ্রী, ভিনাইল ক্লোরাইড, ইউরেনিয়ামের সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অধিক।
ফুসফুসে ক্যান্সারের লক্ষন :
রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে সহজে সারছে না এমন কাশি, বুক ব্যথা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ওজন কমে যাওয়া। যখন ফুসফুসের ক্যান্সার অন্য স্থানে ছড়িয়ে যায় যেমন অস্থিতে ছড়িয়ে গেলে প্রচণ্ড ব্যথা, হাড় ভেঙে যাওয়া, ব্রেইনে ছড়িয়ে গেলে মাথা ব্যথা ও বমি হওয়া, তার সঙ্গে খিঁচুনি হতে পারে। লিভার বা যকৃতে ছড়িয়ে গেলে ব্যথা ও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়।
রোগ নির্নয় :
রোগ নির্ণয়ের জন্য ধূমপানসহ রোগীর সঠিক ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, কফ পরীক্ষা (ক্যান্সার কোষ), ব্রংকোসকপি ও বায়োপসি, এফ এন এসি, এফ এন এবি এবং প্রয়োজনে এম আর আই এর মাধ্যমে রোগের বিস্তৃতি শনাক্ত করা হয়। তাছাড়া বর্তমানে পেট সিটি স্ক্যানের মাধ্যমেও রোগের স্টেজ নির্ণয় করা হয়। ফুসফুস ক্যান্সার চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের আকার, ব্যাপ্তি ও হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্টের ওপর।
চিকিৎসা পদ্ধতি :
মূল চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমো-থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি ও টার্গেট থেরাপি। সার্জারি করা হয় যখন ক্যান্সার উৎপত্তিস্থলে সীমাবদ্ধ থাকে এবং অধিকাংশ ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় মূল চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময়ের সম্ভাবনা অধিক। রেডিয়েশন থেরাপি / বিকিরণ চিকিৎসার মূল ভিত্তি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের ধ্বংস বা ক্ষতি সাধন করা কিন্তু নিকটবর্তী স্বাভাবিক কোষের যেন ক্ষতি না হয় তাই আধুনিক রেডিওথেরাপির সুফল।
রেডিয়েশন চিকিৎসা একাকীও ব্যবহৃত হয় আবার কখনো সার্জারির পর সহায়ক হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে। কখনো উপসর্গ যেমন ব্যথা ও টিউমার বৃদ্ধি কমানোর জন্য ও রেডিওথেরাপি পেলিয়াটিভ হিসেবে কাজ করে। যখন সব ক্যান্সার কোষ সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করা যায় না তখন সার্জারির পর একটা নির্দিষ্ট সময়ে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা পেলে ক্যান্সারের সম্পূর্ণ নিরাময়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তাই এসব বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।
ক্যান্সারের প্রতিষেধক
এটি একটি ছোট ট্রায়াল ছিল, মাত্র ১৮ জন রেকটাল ক্যান্সার রোগী, যাদের প্রত্যেকেই একই DOSTARLIMB ওষুধ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ফলাফল বিস্ময়কর ছিল। প্রতিটি রোগীর মধ্যে ক্যান্সার অদৃশ্য হয়ে গেছে।মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারের ডক্টর লুইস এ ডিয়াজ জুনিয়র, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে রবিবার প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের লেখক , যার ফলাফল বর্ণনা করা হয়েছিল, যা ওষুধ কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন দ্বারা স্পনসর করা হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন যে তিনি অন্য কোনও গবেষণার বিষয়ে জানেন না যেখানে চিকিৎসায় প্রতিটি রোগীর ক্যান্সারকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করে।”আমি বিশ্বাস করি এটি ক্যান্সারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটেছে,” ডাঃ ডিয়াজ বলেন।হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ কিমি এনজি বলেছেন যে ফলাফলগুলি “উল্লেখযোগ্য” এবং “অভূতপূর্ব” যা ভবিষ্যতে ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফলাফল।