সতর্কতাসাধারন জ্ঞান

জ্বর সর্দ্বির ঔষধের নাম কি ও খাওয়ার নিয়ম

বছরের যেকোন সময় বা ঋতুতে সাধারনত অনেকেই সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। এক পরিবারে বা বাড়িতে একজন আক্রান্ত হলে, ঐ পরিবার বা বড়ির আরও দু চারজন আক্রান্ত হতে পারে। তাই সংক্রমন বাড়ার আগেই, জ্বরের সঠিক চিকিৎসা,যা জেনে রাখা দরকার ।

জ্বরের লক্ষন

সর্দিজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশি হয় এবং নাক দিয়ে পানি পড়ে। কখনও কখনও গায়ে ব্যাথা, সামান্য শীত শীত, দেহের উত্তাপ, মানিসিক অস্থিরতা, কাশি, হাত-পা চাবানো, গলায় ঘা ও নাক ও চোখ লাল দেখা যায়। তবে সর্দি শুকনা হলে, মাথায় ব্যথা হয়। অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতই।

জ্বরের কারন

  • বৃষ্টির পানিতে ভেজা।
  • গরমের পর ঠান্ডা লাগা।
  • আবহাওয়া জনিত কারনে, পেট গরম হওয়া।
  • গরমে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পানের কারনেও সর্দিজ্বর হতে পারে।
  • অতিরিক্ত শ্লেষ্মাকর খাবার থেকেও হতে পারে।
  • এলার্জি থেকেও সর্দিজ্বর হয়।

জ্বরের ক্লিনিক্যাল ফিচারঃ

  • প্রথমে নাক দিয়ে গরম শ্বাস বের হয়, নাকে জ্বালা এবং হাঁচি শুরু হয়।
  • নাক দিয়ে প্রচুর পানি ঝরে।
  • অস্বাচ্চন্দ্যবোধ, গলায় ঘা, গায়ে সামান্য তাপবোধ।
  • মাথা ভারবোধ হওয়া।
  • সর্দির রং হলুদ ও ঘারো হতে পারে।

জ্বরের ঔষধের নাম কি ও প্রাঃ চিকিৎসা

অনেকসময় আমরা মনে করি, সামান্য সর্দিজ্বরের জন্য কি আর বড় ডাক্তার দেখানো ঠিক হবে? তাই একটা ফার্ম্মেসীতে গিয়ে, বলে নিয়ে আসলেই হয়।
তাই, আপনিও ঔষধ বিক্রেতাকে বলে ঔষধ খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
বিক্রেতা আপনাকে,

৪-৬ টি প্যারাসিটামল + ক্যাফেইন, ১-২ টা এন্টিবায়োটিক ও ২-৩ টা এন্টি হিস্টামিন ধরিয়ে দিল। আপনিও হয়ত সেরে গেলেন ! কিন্তু এতে আপনার লাভের চেয়ে ক্ষতিই হলো। আশ্চার্য্য হয়ে গেলেন? হ্যাঁ, তিনি আপনার ক্ষতি করেছেন। তিনি একটি অসমাপ্ত চিকিৎসা করেছেন।

তাই অযথা যার তার কাছে গিয়ে, চিকিৎসা করাবেননা। আপনি নিজেই কয়েকটা ঔষধ কিনে খাবেন। এতে কোন এন্টিবায়োটিক থাকবেনা। যদিও এন্টিবায়োটিক গ্রহন করেন, তবে তা যেন অসম্পুর্ন না হয়।

প্যারাসিটামল খাওয়ার নিয়ম

  • প্রথমে প্যারাসিটামল খেতে পারেন, বয়স ও ওজন অনুযায়ী ৫০০ মিগ্রা / ৬৬৫ মিগ্রা দিনে ৩-৪ বার খেতে পারবেন। জ্বর কমে গেলে খাওয়া বন্ধ করে দিবেন।
  • যদি নাক দিয়ে পানি ঝরে – এন্টিহিস্টামিন জাতীয় অনেক ঔষধের মধ্যে, যেকোন ভাল কোম্পানির ফেক্সোফেনাডিন খেতে পারেন, বয়স অনুযায়ী ৬০/১২০/১৮০ মিগ্রা পাওয়া যায়। তা রোজ ১ টা করে ৩-৫ দিন খেতে পারেন। ১২ বছরের নিচে ৬০ মিগ্রা ও ১২ বছরের উপর যে কেউ, ১২০ বা ১৮০ মিগ্রা রোজ ১ টা খেতে পারবেন।
  • জ্বর বেশী মনে হলে, প্যারাসিটামল সাপোজিটরী পাওয়া যায়, এটাও মলদ্বারে ব্যবহার করতে পারেন।
  • ২-৩ দিন ঔষধ খাওয়ার পরও যদি কোন পরিবর্তন না দেখেন। তাহলে ভাল একজন ডাক্তার দেখাবেন। তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী একটি এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দিবেন। এই এন্টিবায়োটিক যতদিন খেতে বলবেন, ততদিনই খেতে হবে। জ্বর কমে গেলেও এন্টিবায়োটিক ঔষধ নির্ধারিত দিন পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে।

তবুও একটা প্রাথমিক চিকিৎসার ধারনা দিচ্ছি, প্যারাসিটামল ৫০০-৬৫০mg ১ টা করে ৩-৪ বার দৈনিক। সর্দি কাশি থাকলে – যেকোন এন্টি হিস্টামিন যেমন সেটিরিজিন / ফেক্সো ফেনাডিন / রুপাটাডিন এর যেকোন ১ টি রোগের তীব্রতা অনুযায়ী রোজ ১ টি করে ৫-৭ দিন। কাশি বেশী হলে সলবিউটামল অথবা মন্টিলুকাস্ট নিয়ম অনুযায়ী সেবন করা যাবে, এগুলো সম্পর্কে জানতে আমাদের ঔষধ পরিচিতি বিষয় গুলো দেখতে পারেন।

জ্বরের এন্টিবায়োটিক ঔষধের নাম

জ্বরের এন্টিবায়োটিক ঔষধ সাধারণত তেমন প্রয়োজন হয়না। তবুও ১-২ দিন প্যারাসিটামল খাওয়ার পরও যদি উন্নতি না হয়। তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে, ৩-৫ দিন দৈনিক ১ টি করে এ্যাজিথ্রোমাইসিন অন্যান্য ঔষধের সাথে সেবন করা যায়। এতেও যদি উন্নতি না হয় তাহলে ডাক্তার প্রয়োজনীয় কিছু ব্লাড টেস্ট দিতে পারে, টাইফয়েড বা নিউমোনিয়া হয়েছে কিনা জানার জন্য। এগুলো করাবেন, পজিটিভ হলে, সেফিক্সিম ক্যাপসুল দিনে ২ বার ৭ দিনের জন্য দিতে পারেন। তা প্রয়োজন অনুসারে ২০০ অথবা ৪০০ মিগ্রা হতে পারে। অথবা ডাক্তার যদি মনে করেন – যে সেফট্রিয়াক্সন ইঞ্জেকশন এর দরকার তাহলেও দিতে পারেন। এখানে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই অবহেলা বা নিজ থেকে কোন ঔষধ সেবন করা যাবেনা।

পরিশেষেঃ

জ্বর আসার সাথে সাথে,, নরমাল প্যারাসিটামল খেয়ে নিলে, তেমন কোন এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়না। ঔষধের সাথে, মাথায় পানি ঢালা, শরীর মুছে দেয়া, এবং একটু ঘুমাতে পারলে এসব জ্বর তেমন কোন সমস্যা করতে পারেনা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, গা মুছে দেয়া। একটি পরিস্কার গামচা ভিজিয়ে চিপে নিবেন, সমস্ত গা মুছে দিয়ে গরম কাপড় জড়িয়ে দিন। প্রয়োজনে ১-২ ঘন্টা অন্তর এভাবে কন্টিনিউ করেন। জ্বর কমে যাবে।

রোগবালাই ডটকম সবসময় আপনার নিরাপদ স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে চায়। নিয়মিত আপডেট পেতে, আমাদের ফেজবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন। মাঝে মাঝে, আপনার ফেজবুকে শেয়ার করে, বন্ধুদের জানিয়ে দিন, আপনিও স্বাস্থ্য সচেতনদের একজন।

আর হ্যা, প্যারাসিটামল ক্যাফেইন এড়িয়ে যাওয়ার চেস্টা করবেন। প্রয়োজনে নরমাল প্যারাসিটামল (৫০০ মিগ্রা) ২ টা একসাথে খেতে পারবেন। তবুও এক্সট্রা বা প্লাস এড়িয়ে চলা ভাল। জ্বরের সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে মন্তব্য থাকলে জানাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X