সতর্কতাসাধারন জ্ঞান

তুলশী | বাসক নাম দিয়ে সাধারন মানুষকে কি খাওয়াচ্ছে !

এখনো বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ সাধারন মানুষ, ইউনানী, আয়ুর্বেদীক নাম শুনলে, খুব খুশি হয় এই ভেবে – এটা নিরাপদ চিকিৎসা ব্যাবস্থা বা পদ্ধতি। আর এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে, কিছু অসাধু প্রতিষ্টান সাধারন মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। নিজেদের সুখের ভবিষ্যত গড়তে, এ্যালোপ্যাথিক ঔষধের মিশ্রণে তুলশী-বাসক নাম দিয়ে সাধারন মানুষকে কি খাওয়াচ্ছে ! এই নিয়ে কিছু লেখার চেস্টা করছি। স্বজাতির কল্যানে যদি একটু কাজে লাগে।

তুলশী বা বাসক এ যা থাকার কথা ছিল-

আয়ুর্বেদীক বা ইউনানী ফর্মুলারী অনুযায়ী তুলশী বা বাসকে কোন এ্যালোপ্যাথিক কেমিক্যাল থাকার কথা নয়। সাধারনত আমরা জানি, তুলশী ও বাসকের নির্যাস, এবং সহযোগী উপাদান হিসাবে, মধু, আদাশুঠ, লবঙ্গ ইত্যাদি দিয়েই তুলশী বা বাসক বাজারজাত করার কথা। কিন্তু অসাধু কিছু ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্টান, ক্লোরফেনিরামিন মেলিয়েট দিয়েই তুলশী বা বাসক নামে বাজারজাত করতেছে। যা এ্যালোপ্যাথিক কোম্পানীগুলো হিস্টাসিন, সিনামিন বা এই জাতীয় নামে বাজারজাত করে আসছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাতে অসুবিদা কি? জ্বী, এটা বলার জন্যই আজকের লেখা তুলশী বা বাসক নাম দিয়ে সাধারন মানুষকে কি খাওয়াচ্ছে ।

তুলশী বা বাসকের মান :

আমরা যেটা এ্যালোপ্যাথিক হিসাবে সেবন করছি, তার প্রস্তুত প্রনালীতে আছে কঠোর পরীক্ষা নীরিক্ষা ও মাননিয়ন্ত্রনের ব্যাবস্থা।
আর যারা এক নাম ব্যাবহার করে, অন্য নামের বা অন্য গোত্রীয় র- মেটারিয়ালস বা উপাদান দ্ধারা ঔষধ উৎপাদন করে, তারা কতটুকু মাননিয়ন্ত্রন করবে, তা অনুমানেই বলে দেয়া যায়।

কাশির ঔষধ :

এখন আসি আরেকটি প্রতারনার বার্তা নিয়ে, আমরা হিস্টাসিন জাতীয় যেই ঔষধ কিনে খাই, তার বাজার মুল্য ২২-২৫ টাকা।
কিন্তু সেইম উপাদানের তুলশী বা বাসক কিনে খেতে হচ্ছে ৫৫-৭০ টাকায়। তবুও তা মিডফোর্ড থেকে আমদানী করা। মাত্রা নির্ধারনের জন্য ল্যাব আছে কিনা তা প্রশাসন ছাড়া মন্তব্য করা উচিত নয়, তাই বলতে পারছিনা। হার্বসের রং কালো হয়, তাই যেকোন একটা হার্বস ব্যাবহার করলেই একটা কালার চলে আসে, তাই হয়ত রং এর ব্যাপারে অভিযোগ করলে সত্য হবেনা। অযথা অভিযোগ করে, পাঠককে বিভ্রান্তি ছড়ানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়।

অন্তত ২০-৩০ টি প্রতিস্টানের তুলশী বা বাসকের উপর গবেষনা করে নিশ্চিত হয়েই প্রতিবেদনটি করছি। এগুলোর খুচরা মুল্য ৫৫-৭০ টাকা হলেও, পাইকারী মুল্য ১৫-২০ টাকার বেশী নয়। বুজতেই পারছেন এটা রোগীর সাথে কতবড় প্রতারনা। যে ঔষধ দোকানদার রোগীর পকেট থেকে সরাসরী টাকা বের করে আনতে লজ্জা পাচ্ছেন, তারাই মুলত একটা বোতল হাতে ধরিয়ে, এর বিনিময়ে টাকাগুলো নিয়ে যান আর কি।

হিস্টাসিন এর আদলে তুলশী !

সবচেয়ে বড় স্পর্শকাতর বিষয় হলো, হিস্টাসিন এ ক্লোরফেনিরামিন মেলিয়েট, প্রতি ৫ মি লি তে ২ মি গ্রা হিসাবে থাকে। যা অত্যান্ত কঠোরভাবে নির্ধারন করা হয়। কিন্তু ঐ সমস্ত কোম্পানীর তুলশী বা বাসকে মাত্রা নির্ধারন করা হয় কিভাবে, তা হয়ত তারাই বলতে পারবেন। এগুলো বলার উদ্দেশ্য একটাই – আমরা এই তুলশী বা বাসক দেখলেই, নিশ্চিন্তে শিশুদের কফ-কাশির জন্য সেবন করতে দেই।

তাই বলে সব ইউনানী – আয়ুর্বেদীক এরকম নয় !

বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ এর কাছাকাছি ইউনানী ও আয়ুর্বেদীক প্রতিষ্টান আছে। এর মধ্যে সব যেমন শতভাগ সঠিক নয় – আবার সব প্রতিষ্টান খারাপ ও নয়। একমি, স্কয়ার, ইবনে সিনা, হামদর্দ, ইটিল্যাব, মোজাহের, ফেনী দাওয়াখানা, ফেনড্রাগসহ এমন অনেক কোম্পানী আছে যারা সেই নিরাপদ ও এতিহ্যবাহী ভেষজ চিকিৎসায়, ঔষধ প্রস্তুতে আপোষহীন হয়ে মানুষের সেবা করে আসছেন। কিন্তু কিছু অসাধু কোম্পানীর জন্য ভাল কোম্পানীগুলো যেন পিছিয়ে না পড়েন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X