হেচকি বন্ধ বোবায়ধরা ও বিচানায় প্রস্রাব করার ঔষধ কি
হেচকি উঠা | বোবায় ধরা | বিছানায় প্রস্রাব করা
হেচকি বন্ধ করার ঔষধ বলার আগে কিছু কথা বলে নিই। কিছুদিন আগেও একটা প্রসক্রিপশন দেখে, আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়েছিলাম। এটা ছিল একজন ডিএমএফ ডাক্তারের লেখা, রোগীর বর্ননায় জানতে পারলাম, হিক্কা ধমন হচ্ছেনা,
আবার তার আগেও একদিন, একলোককে তাবিজ আনতে দেখলাম, কারন জানতে চাইলে বলল, বাচ্চা বিছানায় পশ্রাব করে, তাই তাবিজ নিয়ে আসা।
আরও একজনকে হতাশার স্বরে বলতে শুনলাম, প্রায় রাতেই ঘুমে বোবায় ধরে। এর থেকে পরিত্রান না পেলে, সে এমনিতেই ভয়ে কোন একরাতে মারা যেতে পারে। তাই একা ঘুমায়না। এই ৩ রোগের চিকিৎসা আছে ! এটা অনেকেই জানেনা।
হিক্কা বা হেচকি উঠা :
আমাদের বুকের খাঁচাকে পেট থেকে আলাদা করেছে একটি মাংসপিণ্ড। যার নাম ডায়াফ্রাম বা বক্ষচ্ছদা। শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এই ডায়াফ্রামের। এই ডায়াফ্রামের আকস্মিক সংকোচনের কারণেই হেঁচকি বা হিক্কা শুরু হয়। প্রতিবার সংকোচনের ফলে ভোকাল কর্ড সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় বলে, হিক শব্দ তৈরি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হেচকির ঔষধ কি
একদম সহজ, যখনি হিক্কা নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ে, তখনই চিকিৎসার প্রয়োজন। মাত্র ২-৩ টি ” হেলোপেরিডল ” গ্রুপের টেবলেট, অর্ধেকটা করে দিনে ২ বার সেবন করলেই হিক্কা সেরে যায়।
বোবায় ধরলে কি করবেন
হঠাৎ মধ্যরাতে আপনার ঘুম ভেঙে গেল। আপনার বুকের ওপর ভারী কিছু বসে আছে বলে অনুভব করলেন। এত ভারী কিছু যে ঠিকঠাক নিশ্বাসই নিতে পারছেন না। যখন টের পেলেন, আপনি চাইলেও শরীরের কোনো অংশ নাড়াতে পারছেন না, এমনকি চিৎকারও করতে পারছেন না। এটি সাধারণত একজন ব্যক্তির ঘুমিয়ে পড়া বা জেগে ওঠার আগমুহূর্তে ঘটে। সহজ কথায় নিজেকে এমন অসহায়ভাবে আবিষ্কার করাকেই স্লিপ প্যারালাইসিস বা বোবায় ধরা বলে।
বোবায় ধরার চিকিৎসা
ঘুমের ব্যাঘাতে বোবায় ধরার সংখ্যা বেশী, আর যদি এজন্য বোবায় ধরে তাহলে চিকিৎসা একদম সহজ। “এমিট্রিপটাইলিন হাইড্রোক্লোরাইড” ১০ মি গ্রা, (জেনেরিক নাম দেয়া) প্রথম ৪ রাতে অর্ধেকটা করে, তারপর থেকে প্রতি রাতে ১ টা করে ১৫ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত সেবন করা লাগতে পারে। আশা করা যায় বোবা ধরা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। তবে ঘুম নিয়মিত না হলে, আবারও সমস্যা হতে পারে।
বিচানায় পশ্রাব করা :
সাধারণত, ৪-৫ বছর বয়সের মধ্যে একটি শিশু তার প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে ফেলে। কিন্তু কোনো কোনো সময় শিশুর এই বয়সের পরেও প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বিশেষ করে রাতে ঘুমালে বিছানা ভিজায়।
এ সমস্যা মানসিক কারণ ছাড়াও শারীরিক কারণে হতে পারে। তাই শারীরিক বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হতে পারে।
পরিবারে এ ধরনের সমস্যা মা-বাবার বা ভাই-বোনের থাকলে, নতুন ভাই বা বোনের জন্ম হলে, মানসিক চাপ যুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠলে, অতিশাসন, অতি স্নেহে, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় না হলে, পারিবারিক অশান্তি, কোনো কারণে মা থেকে দূরে থাকলে, শিশু যদি মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় তবে এ ধরনের রোগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
শিশুর যাতে এ ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য ২০ মাস বয়স থেকে তাকে প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ শেখাতে হবে। শিশুকে প্রস্রাব পায়খানার নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দিতে হবে ধীরে ধীরে ধৈর্য সহকারে। কারো কারো প্রস্রাব পায়খানার নিয়ন্ত্রণ শিখতে একটু দেরি হতে পারে, সেজন্য অধৈর্য হওয়া ঠিক হবে না।
অনেক সময় শিশু নিজের অভিব্যক্তির মাধ্যমে প্রস্রাব করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে, সেগুলো বোঝার চেষ্টা করুন এবং তাতে সাড়া দিন।
রাতে নির্দিষ্ট সময় পর পর শিশুকে বাথরুমে নিয়ে যান এবং তাকে প্রস্রাব করার জন্য উৎসাহ দিন।
যথেষ্ট বয়স হওয়া সত্ত্বেও (৫-৬ বছরের বেশি) বিছানায় প্রস্রাব করে এমন শিশুর জন্য কিছু নিয়ম নীতি মেনে চললে এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে শিশুর এ ধরনের সমস্যা ভালো হয়ে যায়।
বিচানায় প্রস্রাবের চিকিৎসা –
এই ক্ষেত্রেও বেশী কোন গুলমাল না থাকলে ১ থেকে দেড় মাস প্রতি রাতে বাচ্চার বয়স অনুসারে এক চতুর্থাংশ থেকে অর্ধেকটা পর্যন্ত “এমিট্রিপটাইলিন হাইড্রোক্লোরাইড ” ১০ মিলিগ্রাম দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও হোমিওতেও অনেক চিকিৎসা আছে। যা রোগীকে সুস্থ্য করে তুলতে পারে।
এই ৩ রোগের চিকিৎসা আছে ! একথা শুনে অনেকেই হয়ত হাসতে পারেন। বা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, তবে এটাই সত্য এগুলো একেকটা রোগ। আর প্রত্যেকটা রোগেরই কোন না কোন চিকিৎসা রয়েছে। তবে, কোন ঔষধ ই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়। এখানে শুধু একটা ধারনা দেয়া হলো। এটা কোন প্রেশক্রিপশন নয়।
আরও পড়ুন – হার্ট এটাক হলে কি করবেন? কিভাবে হার্ট এটাক এড়ানো সম্ভব