ভারতে চিকিৎসা নিতে কত খরচ হয় | ট্রেনে যাতায়াত
ভারতে চিকিৎসা নিতে কত খরচ হয়! তা অনেকটা যাতায়াতের উপর নির্ভর করে। আজকে যাতায়াতের ব্যবস্থা নিয়ে কিছু আলোচনা করবো। বিশেষকরে ট্রেন ভ্রমন!
ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে চান তারা সাধারনত ট্রেনে করেই বেশি সংখ্যক লোক যেতে ইচ্ছুক আর সেটা কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকেই বাংলাদেশের ৮০% লোক যাতায়াত করে বিভিন্ন গন্তব্যের দিকে যেমন হাওড়া টু চেন্নাই, হাওড়া টু দিল্লি, হাওড়া টু আগ্রা, হাওড়া টু গোয়া ইত্যাদি। আসুন জেনে নেই কিভাবে যাবেন এবং ট্রেনের বিস্তারিত আপডেট তথ্য।
ইন্ডিয়ার প্রধান যাতায়াত ব্যবস্থা হচ্ছে ট্রেন। এই ট্রেন দিয়েই প্রায় ১২৫ কোটি লোকের দেশে বিভিন্ন রাজ্যে যাতায়াত করে। আর তাই ট্রেনের টিকিট নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
ট্রেনের গন্তব্য, সময় ও ভাড়া
কলকাতার হাওড়া, কলকাতা এবং শিয়ালদহ স্টেশন থেকে প্রতিদিন ৬০০ এর উপর ট্রেন যাওয়া আসা করে বিভিন্ন রাজ্যের দিকে। কিন্তু করোনার সময় এখন ট্রেন সংখ্যার চারভাগের একভাগ চলছে।
যেমন:
১। হাওড়া টু চেন্নাই
২। হাওড়া টু বেংগালুর
৩। শিয়ালদাহ টু দিল্লি
৪। হাওড়া টু মুম্বাই
৫। শিয়ালদাহ টু নিউ জলপাইগুড়ি (দার্জিলিং)
৬। হাওড়া টু গোয়া
৭। হাওড়া টু আগ্রার তাজমহল
৮। হাওড়া টু শীমলা/মানালি
৯। শিয়ালদাহ টু আজমির শরিফ ( রাজস্থান )
১০। হাওড়া টু কাশ্মির
১১। হাওড়া টু ইরনাকুলাম (কেরালা)
১২। হাওড়া টু গোয়াহাটি (শিলং)
১৩। হাওড়া টু ভেলর ( কাটপাডি স্টেশন )
১৪। চেন্নাই টু বেংগালুর/ভেলর
এবং আরো অনেক স্থানে যাওয়া আসা করে। মুলত ইন্ডিয়ানরা এক যায়গা থেকে আর এক যায়গা যেতে ট্রেন ব্যবহার করে থাকে। কারণ ট্রেনের যাতায়াত ব্যবস্থা খুব ভালো এবং ভাড়াও তুলনামূলক কম।
একটা ট্রেনের সিটের ধরণ :
১। AC ( 1A ) মানে First AC
2। AC ( 2A ) 2 tier
৩। AC ( 3A ) 3 tier
৪। Sleeper Non AC
৫। 2S (Second Sitting Normal )
দুরপাল্লা যাওয়ার জন্য একটা ট্রেনের অনেক গুলি বড় বগি থাকে যেমন ২০/২২ টা বগি বা আরো বেশি। আর প্রতিটি ট্রেনের কিছু এসি বগি থাকে যেখানে প্রতি বগিতে ৮ টা করে রুম থাকে। প্রতি রুমে ৮ করে সিট থাকে যদি সিটের ধরণ 3A হয়ে থাকে। 3A তে তিনটি বগি যেমন বগি B1, B2, B3, B4 আর প্রতিটি সিটে আপনি বসে, শুয়ে আরাম করে যেতে পারবেন। ভারতে চিকিৎসা নিতে যারা যেতে চান, তাদের জন্য জানা দরকার।
যেহেতু লং জার্নি তাই ট্রেনের সিটের ব্যবস্থাও খুব সুন্দর। প্রতিটি সিটের সাথে বালিশ, চাদর থাকে যাতে ঘুমানোর সময় ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু করোনাকালীন সময়ের জন্য সিটের সাথে বালিশ চাদর এগুলা দিচ্ছে না, যাওয়ার সময় সাথে করে নিয়ে যাওয়াই ভালো।
3A seat
এখানে উপর নিচ করে ৩ টা করে মোট ৬ টা সিট এবং পাশে উপর নিচ করে ২ টা মোট ৮ টি সিট থাকে। আর চলাচলের জন্য ২ ফুটের মত ফাকা জায়গা থাকে। মানে ওই রুমে ওই ৮ জনের বেশি থাকতে পারবে না। প্রতিজনের আলাদা আলাদা সিট। এসি সিটের ভাড়া বেশি হয়ে থাকে। এটা মুলত 3A Tier বা Sleeper বগির কথা উল্লেখ করলাম।
2A seat
আর যদি সিটের ধরণ 2A হয় তাহলে প্রতি রুমে ৪ টা করে সিট থাকে আর এক রুম থেকে আর এক রুম দেখা যায় না কারণ পরদা দিয়ে ঢাকা থাকে। সিট থাকে উপর ও নিচ সিস্টেমে অর্থাৎ উপরে পাশাপাশি দুইটা।
এবং নিচে পাশাপাশি দুইটা মাঝখানে ২ ফুটের মতো ফাকা থাকে নিজেদের চলাচলের জন্য। আর পরদার পাশে সাধারণ মানুষ এর যাতায়াতের জন্য রাস্তা থাকে এবং অপর পাশে উপর নিচ করে ২ টা সিট থাকে যা পরদা দেওয়া থাকে। তাহলে 2A tier এ এক রুমে ৪ টা + অন্য পাশে ২ টা মোট ৬ টি সিট থাকে।
1A seat
আর সিটের ধরণ 1A হচ্ছে একদম প্রথম শ্রেণী। চরম ভি আই পি সিস্টেম। একবার গেলেই বুঝবেন, ট্রেনেও এতো VIP ব্যবস্থা থাকতে পারে। এক রুমে ২ জন থাকতে পারবে মানে ২ টা সিট থাকবে।
আপনার মোবাইল বা ল্যাপ্টপে চারজও দিতে পারবেন। প্রতি রুমে সেই ব্যবস্থা করা থাকে তবে থ্রি প্লাগ নিয়ে গেলে আপনার জন্য বেটার বা মাল্টিপ্লাগ।
Non ac sleeper seat
আর নন এসি যে বগি গুলো সেগুলোকে স্লিপার ( Sleeper) বলা হয়ে থাকে মানে S1, S2, S3, S4, S5, S6, S7 বগি নামে পরিচিত। এই বগির যে সিট তাতেও আপনি শুয়ে, বসে, আরামে যেতে পারবেন কিন্তু এসি নেই।
আর আপনার ব্যাগ বা লাগেজ আপনার ওই রুমের সিটের নিচে রাখবেন। কোন সমস্যা তেমন হয়না, তারপরও সাবধান রাখবেন। স্লিপারের সিটের ভাড়া কম। এখানে সিট সংখ্যা তুলনায় যাত্রী অনেক বেশি থাকে মোটকথা গাদাগাদি করে যেতে হয়।
তাই আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য যেকোনো এসি ক্যাটাগরি একটা সিট বুকিং করা উচিত। ট্রেনের টিকিট তিনমাস আগে থেকেও কাটা যায়। সবার জন্য পরামর্শ থাকবে আপনার ভ্রমণের 20-25 দিন আগে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখবেন আমাদের কাছ থেকে। টিকিট নিয়ে আর চিন্তা থাকবে না যে ট্রেনের সিট ফাঁকা থাকবে কিনা তাহলে।
2S seat
এই সিটে শুধুমাত্র গাদাগাদি করে বসে যেতে হবে। শোবার কোন জায়গা নাই। ধরুন 4 টা সীট আছে বসার, সেখানে 6 থেকে 7 জন বসে যেতে হবে। এই ক্যাটাগরি সিটে যাওয়া খুবই কষ্টদায়ক। ভারতে চিকিৎসা নিতে যারা যেতে চান। তাদের জন্য এই উপযুক্ত নয়।
ট্রেনের টিকিটের দাম:
এক এক রুটের ভাড়া এক এক রকম হয়ে থাকে এখানে আমরা হাওড়া টু চেন্নাই ও কাটপাটি ভেলোর যাওয়ার ভাড়া নিয়ে আলোচনা করলাম।
আর একটা ক্যাটাগরি আছে সেটা হলো Tatkal ক্যাটাগরি। এই ক্যাটাগরিতে টিকিট ম্যাক্সিমাম সময় পাওয়া খুব কঠিন।Tatkal ক্যাটাগরি মানে হচ্ছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেতে চান সেক্ষেত্রে একদিন আগেই কাটা সম্ভব তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যেতে হবে।
ধরুন, আপনি হাওড়া থেকে চেন্নাই যাবেন ১৯ তারিখ রাতের/দুপুরের ট্রেনে তাহলে ওই তারিখের টিকিট ছাড়বে ১৮ তারিখ সকাল ১০ টায় আর শেষ হবে ১২ টায় মানে ২ ঘন্টার মধ্যে সেল হয়ে যাবে।
তারমানে ১৮ তারিখ দুপুর ১২ টার পর আপনি টিকিট পাবেন যা দিয়ে ১৯ তারিখ দুপুরে বা রাতে ভ্রমণ করতে পারবেন। কিন্তু এই টিকিটের কোন নিশ্চয়তা নেই কারণ টিকিট না পেলে পরের দিন একই ভাবে চেষ্টা করা ছাড়া উপায় নেই তাই জাওয়ার ১৫ দিন আগে অগ্রীম টিকিট নিয়ে রাখা বেটার। অনেক রুটের টিকিট ৩০ দিন আগেও প্রায় শেষ হয়ে যায়।
Tatkal ক্যাটাগরিতে টিকিটের দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। ৬০০/৮০০ রুপি এক্সট্রা আ্যড হবে যেহেতু ইমারজেন্সি। আর বাংলাদেশের ৭০% মানুষ এই সিস্টেমে টিকিট এর জন্য চেষ্টা করে থাকে।
তাই আপনাদের বলছি টিকিট বিড়ম্ববা কি সেটা যিনি পড়েছেন তিনি বুঝেছেন। তাই অগ্রীম টিকিট নিয়ে রাখা উচিত নতুবা টিকিটের জন্য কলকাতা ৭/৮দিন থাকা লাগতে পারে।
রোগবালাই এর অন্যান্য পোস্ট পড়তে ক্লিক করুন।