সাধারন জ্ঞানস্বাস্থ্য টিপস

শিশুর পুষ্টি ও বাড়তি খাবার কিভাবে খাওয়াবেন?

আজকে যে শিশুটি আপনার কোলে, সে হয়ত আপনার পরিবার। এমনকি গোটা দেশকে বহন করার দায়ীত্ব পেতে পারে। তাই একটি শিশুর প্রথম অধিকার হলো- সঠিকভাবে শিশুর যত্ন ও শিশুর পুষ্টি বিষয়ক খেয়াল নেয়া। আমাদের দেশে অনেক শিশু ই অপুষ্টিতে ভুগছে। এই অপুষ্টির প্রধান কারন, শিশুর শরীর বৃদ্ধির জন্য কি খাবার প্রয়োজন। বুকের দুধ কখন কিভাবে খাওয়াতে হবে। কখন থেকে বাড়তি খাবার দিতে হবে। এবং কি খাবার কতবার দিতে হবে। এসব বিষয়ে বাবা মার সঠিক ধারনা না থাকা। সরকারী সচেতনতামুলক প্রচারনা থাকলেও আমাদের তা জানার আগ্রহ কম। তাই শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে।
আবার নিন্ম মধ্যবিত্ত বা নিন্মবিত্তরা মনে করেন, তারা দরিদ্র হওয়ায় আঙ্গুর আপেল কিনে দিতে পারছেননা। তাই হয়ত অপুষ্টির শিকার এই শিশুরা। এটা সম্পুর্ন ভুল- স্বাভাবিক ও ঘরে থাকা খাবার দিয়েই শিশুকে যত্নসহকারে বেড়ে তুলা সম্ভব।

শিশুর পুষ্টির জন্য বুকের শালদুধ :

গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পর মায়ের বুকে প্রচুর দুধ সঞ্চিত হয়। প্রথম যে দুধ পাওয়া যায় এটাই কলোস্ট্রাম বা শালদুধ। গর্ভাবস্থায় মায়ের স্তনে এই শালদুধ সঞ্চিত হয়। প্রসবের পর ৩-৪ দিন পর্যন্ত মায়ের স্তন থেকে নিসৃত হয়। এই দুধ অত্যন্ত ঘন, আঠালো এবং হলদে রঙের হয়ে থাকে। এতে আমিষের পরিমান বেশী ও স্নেহের পরিমান কম থাকায়, নবজাতকের হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়। এই শালদুধ নবজাতকের জন্য একটি অমুল্য রোগপ্রতিরোধক ও এন্টিবডি তৈরীকারক। সঠিকভাবে শালদুধ খাওয়াতে পারলে, পোলিও, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ভাইরাসজনিত রোগ, ও ডায়রিয়ার আক্রমন কম হয়। বা কোন কোন শিশুর একেবারেই হয়না। এই শালদুধ শিশুর অন্ত্রে ল্যাকটোব্যাসিলাস বিফিডাস নামের, একধরনের সাহায্যকারী জীবাণু সংখ্যা বৃদ্ধি করে। যা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন থেকে শিশুকে রক্ষা করে। এবং পরবর্তিকালে আন্ত্রিক ভাইরাস বা আমাশয় জাতীয় রোগ থেকেও রক্ষা করে।

মায়ের দুধের উপকারীতা :

  • শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় একমাত্র সুষম খাদ্য।
  • মায়ের দুধ উষ্ণ, খাটি ও জীবাণুৃুক্ত।
  • মায়ের দুধে বিভিন্ন উপাদান যেমন – আমিষ, শর্করা, ভিটামিন, খনিজ লবন, এমনভাবে আছে, যা শিশুর জন্য যথেষ্ট।
  • মায়ের দুধে টরিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা শিশুর ব্রেন বাড়াতে সাহায্য করে।
  • মায়েদেরও অনেক উপকার হয়। যেমন – জন্মনিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে, স্তনে গোটা বা টিউমার হওয়ার আশংখা কমায়।

শিশুর যত্নে বাড়তি খাবার :

শিশুর জন্মের ৬ মাস পর্যন্ত অন্য কোন বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয়না। ৬ মাস পর থেকে আস্তে আস্তে বাড়তি খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় শিশু অন্য খাবার খেতে চাইবেনা। এবং এতে করে আবারও অপুষ্টির শিকার হবে। এই বাড়তি খাবারকে অনেক জায়গায় তোলা খাবারও বলে থাকে।

বাড়তি খাবার হিসাবে কি থাকবে :

খিচুরী:
চাল, ডাল, তেল, ও লবন দিয়ে নরম খিচুরী রান্না করে খাওয়ানোর চেস্টা করুন। সম্ভব হলে, মাছ, মাংস বা ডিম এর যেকোন একটি সাথে রাখতে পারেন।
আলু:
মিষ্টি আলু বা গোল আলু সেদ্ধ করে, তা ছটকিয়ে নিবেন। অতপর পরিস্কার হাত বা চমচের সাহায্যে অল্প অল্প খাওয়ানোর চেস্টা করুন।
সুজি বা চালেরগুড়া:
গমের সুজি বা চালের গুড়া, চিনি, দুধ দিয়ে নরম পায়েস রান্না করুন। রাতের খাবার হিসাবে পায়েস বা ফিরনী রাখতে পারেন।
রুটি:
নরম রুটি হাতে ছটকে দুধ অথবা ডাল দিয়ে খাওয়াতে পারেন। এতে প্রোটিনের ঘাটতি দূর হবে। একই খাবার বারবার না খাইয়ে, একই দিনে ভিন্ন ভিন্ন খাবার দেয়ার চেস্টা করুন। এতে শিশুটি আলাদা আলাদা স্বাদ পাবে। বিরক্তও হবেনা।
মৌসুমী ফল:
মৌসুমী ফল বলতে যখন যা পাওয়া যায়, তা ই খোসা ও বিচি ছাড়িয়ে হাতে কচলে নিয়ে, একটু একটু করে খাওয়ানোর চেস্টা করুন।
বিস্কুট, কেক, পাউরুটি যেকোন একটি অল্প দুধে ভিজিয়ে চামচ দিয়ে বিকালের নাস্তা হিসাবে দিতে পারেন। তবে সল্টেড বিস্কুট বা চিপস না রাখাই ভাল। কারন এতে টেস্টিং সল্ট থাকতে পারে। আর এটা কিডনীর ক্ষতির কারন হতে পারে।

শিশুকে কিভাবে খাওয়াবেন :

শিশু প্রথম দিকে এসব খেতে চাইবেনা। তাকে বিভিন্ন কৌশলে অভিনয়ের মাধ্যমে খাবার খাওয়া শেখাতে হবে। মনে রাখবেন একদিনেই সব খাবার খাওয়ানোর চেস্টা করবেননা। একটি শিশু প্রথম দিকে যদি এক চামচও খেয়ে থাকে, খুশি হবার কথা। তাকে পেট পুরে খাওয়ানোর চেস্টা করবেননা। অবশিষ্ট খাবার ফেলে দিতে পারেন। প্রথম দিতে খাবার নস্ট বা অপচয় হতে পারে, মন খারাপ করলে চলবেনা। অধৈর্য হলেও চলবেনা। অযথা খাচ্ছেনা বা খেতে চায়না বলে হালছেড়ে দেয়া ব্যর্থতার পরিচয় দেয়া। অথবা অযথা রুচি বাড়ার ঔষধ খাওয়াতে যাবেননা। উপরের নির্দেশনগুলো মেনে যত্ন চালিয়ে যান।

শিশুর বাড়তি খাবার কতবার খাওয়াবেন:

৬-২৩ মাস পর্যন্ত একটি শিশুকে দিনে ৪ বার খাওয়াতে হয়। সে যতটুকু খায় তাই যথেস্ট, তবে একেবারেই না খেলে, আলাদা চিন্তার প্রয়োজন হয়। তবে, খাবার কম বেশী যদি খেয়ে থাকে টেনশনের কিছু নেই। এভাবে ১১ মাস পর্যন্ত চলবে। এরপর থেকে নরম ভাত, সেদ্ধ রুটি, ডাল, ডিম, মাছ, মাংস, সেমাই, পায়েস, ফিরনী, কলা, চিড়া সাধ্য অনুযায়ী এসব খাবারও চার বেলা খাওয়াতে হবে। এভাবে ২ বছর পুর্ন হওয়া পর্যন্ত চলবে।

শিশুর দুই বছর পর থেকে :

পরিবারের সবাই যা খায়, শিশু তা ই খাবে। বাবা মা সারাদিনে যে পরিমান খায়, শিশুটি তার অর্ধেক খাবে। প্রয়োজনে ৩ বেলার স্থলে ৪ বারে খাওয়াবেন।
শিশুর যত্ন ও পুষ্টি নিয়ে উপদেশ দেয়ার আগে, তার পরিবারের বিষয়ে জানতে হবে। বাজারের দামী খাবারের পরামর্শ দিতে গিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন। কিনে খাওয়ানোর ক্ষমতা আছে কিনা।

  • শুরুতে তরল আকারে খাবার শুরু করতে হবে।
  • ঐ পরিবারের প্রতিদিনের খাবার থেকে, বাচ্চার খাবার তৈরী করা যায়।
  • একবার রান্না করা খাবার দুইভাগ করে, তা দুইবারে খাওয়ানো যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বাসি যেন না হয়।
  • খাবার খাওয়ানোর আগে, নিজকে পরিস্কার করে নিতে হবে। হাতের নখ ছোট করা, হাত ধোয়া ইত্যাদি।
  • বাচ্চার দুই বছর হলে, এক সাথে রান্না করতে পারেন। তবে ঝাল, ও মসলা কম দিতে হবে।
  • শিশুর পুষ্টি ও যত্ন নিয়ে পরিবারে আলোচনা করা, প্রত্যেক পরিবারেরই উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X