নবজাতকের চিকিৎসা ও যত্ন! না জানলে ভবিষ্যত খারাপ হবে।
নবজাতকের চিকিৎসা ও যত্ন! না জানলে ভবিষ্যত খারাপ হবে।
পেডিয়াট্টিক শিশু বা নবজাতকদের নিয়ে শুধু আমরা নয়, সমগ্র বিশ্ব আজ চিন্তিত। বাতাসে সীসার পরিমান বেশী, খাদ্যে ভেজাল, অক্সিজেনের পরিমান কমে যাওয়া। এবং এন্টিবায়োটিকের বিরুপ প্রভাবে, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আজ হুমকির মুখে।
তাই একটু বেশী সতর্ক না হলে, এই শিশু যখন আস্তে আস্তে বড় হবে। শারীরিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়েই বড় হতে থাকবে। পুষ্টিহীনতা থেকে শুরু করে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স, এবং এন্টিবডির ক্ষমতা হারাতেও পারে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে, সামান্য জ্বর – সর্দিতেও কাতর হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে এদের জীবনে।
যত্ন কিভাবে করবো
জন্ম থেকেই যত্ন শুরু করতে হবে। জন্মের সময় প্রসুতি মাকে, হাসপাতালে নিতে হবে। তা কোন সমস্যা ছাড়াই নিতে হবে। আমরা অনেক সময় সমস্যা না হলে হাসপাতালে নিতে চাইনা। এটা ভুল! তবে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষিত দাঈ থাকলে, যেকোন নার্সের উপস্থিতিতে বাড়িতে ডেলিভারী করাতে পারেন। তার আগে একজন গাইনি ডাক্তার দেখিয়ে নেয়া উচিত।
বাচ্চা জন্ম নেয়ার সাথে সাথে নরম টাওয়েল বা পরিস্কার সুতি কাপড় দ্বারা মুছে নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই পানি ব্যাবহার করা যাবেনা। মুছে নেয়ার পর, আরেকটি গরম কাপর দিয়ে মুড়ে মায়ের বুকের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে রাখতে হবে, যেন মায়ের উষ্ণতা বাচ্চাকে গরম করে রাখে। জন্মের পর লক্ষ রাখতে হবে বাচ্চা কেঁদেছে কিনা? পায়খানা করেছে কিনা। প্রশ্রাব করেছে কিনা। যদি সব ঠিকাটাক ভাবে করে থাকে, এটা খুশির খবর। বাচ্ছা মোটামোটি সুস্থ্য বলা যায়। তবে লক্ষ্য রাখবেন, শরীর ও চোখের দিকে হলুদ বর্ণ হলে ডাক্তার দেখাবেন, জন্ডিস হলো কিনা।
এবার বাচ্চাকে মায়ের শালদূধ খাওয়াতে হবে। শুরুতে সে মুখে খেতে পারবেনা। এটা সাধারনত একটা পরিস্কার চামচে সংরক্ষন করে খাওয়াতে হতে পারে। তবে কোন অবস্থায় নস্ট করা যাবেনা। এখন ধীরে ধীরে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার জন্য স্তনে মুখ লাগিয়ে দিন।
একদিনেই খেতে চাইবেনা, তাই একটু পরপর চেস্টা করুন। যদি কোন সমস্যা দেখা দেয়, এটাকে স্বাভাবিক মনে করবেননা। আগের যুগের কিছু বৃদ্ধার কথায় কান দেবেননা। যেকোন অস্বাভাবিক কিছু নজরে আসলে, শিশু ডাক্তার দেখাবেন। ডাক্তার যদি বলেন, এটা কোন সমস্যা নয়, তবে তা বিশ্বাস করবেন। অন্যথায় এগুলো মানবেননা। আর হ্যা, বাচ্চার নাভি কোন প্রকার আগুনের ভাপ বা চেকা দিবেননা। ২ মাসের আগে মাথার চুল কাটবেননা। রাতে প্রশ্রাব করার সাথে সাথে, বিছানা পাল্টাবেন। অতিরিক্ত পানি ব্যাবহার করবেননা।
চিকিৎসা
যেন থেন ডাক্তার দিয়ে বাচ্চার চিকিৎসা করাবেননা। কারন বাচ্চার ওজন ও শারীরিক ভারসাম্যের উপর ঔষধের ধরন ও মাত্রা নির্ধারন করতে হয়। আমি অনেক দেখেছি, সাধারন ঔষধ বিক্রেতাও পেডিয়াট্টিক ট্রিটমেন্ট করে ফেলে। অথচ সে জানেনা, একটি প্যারাসিটামল ১৫ দিনের বাচ্চাকে কতটুকু মাত্রায় দিতে হয়। এমনও দেখেছি, ১৫ দিনের একটা বাচ্চাকে ৪ ফোটা প্যারাসিটামল দিয়ে চিকিৎসা করতেছে। এই চিকিৎসায় বাচ্চার জ্বরের কিছুই হবেনা। বরং জ্বর বাড়তেই থাকবে। এক পর্যায়ে এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হবে।
কিন্তু শুরুতেই যদি সঠিক মাত্রায় প্যারাসিটামল দেয়া হতো, তাহলে জ্বর সাথে সাথে কমে যেত। এবং এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতোনা। আর যদি আরও মানবিক কোন ডাক্তারের পরামর্শ পেত, তাহলে হয়ত সাজেশন পেত যে, বাচ্চাকে একটু পর পর কাপড় ভিজিয়ে চিপে নিয়ে, গা ও মাথা মুছে দিবেন। তা হতে পারে ১৫ মিনিট পর পর। অবস্থার উপর নির্ভর করবে। তাহলে এত কস্ট করতে হয়না।
ঝুকিপুর্ণ চিকিৎসা
আবার অনেক ডাক্তারকে দেখলাম, ৬ মাসের নিচের বাচ্চাকে, পেটের সমস্যায় “মেট্রোনিডাজল” দিয়ে দেয়। কাশিতে “কেটোটিফেন” সামান্য সমস্যায় সেফিক্সিম দিয়ে চিকিৎসা করে, ডাক্তারী জাহির করে। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ন চিকিৎসা ব্যাবস্থা।
নবজাতককে ৬ মাসের পুর্বে মায়ের দুধ ব্যাতিত কিছু খাওয়ানো উচিত না। এবং খাওয়াবেননা। অন্য কিছু খাওয়ালে পেটের বিভিন্ন সমস্যাসহ, বাচ্চা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে পারে। ৬ মাস পুর্ন হলে, নরম সুজি, কলা কচলে খাওয়াতে পারেন, বিভিন্ন মৌসুমী ফল হাতে ব্লেন্ড করে একটু একটু করে খাওয়াবেন। একদিনেই আপনার মতো পেট পুরে খাওয়াতে যাবেননা।
এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এক – দুই চামচ খেতে পারলেই খুশি থাকবেন। আস্তে আস্তে হজম প্রক্রিয়া গঠন হলেই খাওয়া ও বেড়ে যাবে। আপনি শুধু শিখিয়ে দিবেন নিয়ম করে প্রতিদিন।
প্রথমিক চিকিৎসা
যেকোন প্যারাসিটামল ড্রপ বা ৬ মাসের অধিক হলে সিরাপ ঘরে রেখে দিবেন। জ্বর আসলেই ০.৬ মিলি থেকে বয়স অনুযায়ী ১ মিলি পর্যন্ত ৫-৬ মাসের বাচ্চাকে দিনে ৩-৪ বার খাওয়াতে পারবেন। ৬ মাস থেকে ১ বছর হলে আধা চামচ করে ৩-৪ বার খাওয়াতে পারেন। অন্যান্য সমস্যার জন্য অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারে পরামর্শ নিবেন। গরীব হলে ডাক্তারকে খুলে বলবেন। তবুও যারতার কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিবেননা।
শিশুর যত্ন নিয়ে
অনেক লেখার ইচ্ছা ছিল, সব লেখা একদিনে সম্ভব নয়। তাই আরও একদিন এ বিষয়ে লিখবো ইনশাল্লাহ।