এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী এর কয়েকটি অনন্য উপকারিতা
ঔষধি এই ভেষজের নানা গুণের কথা হাজর বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষের জানা। শরীরে নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে আর অসুখ-বিসুখ সারিয়ে তুলতে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী অতুলনীয়। এই উদ্ভিদজাত খাদ্য বা পানীয় হিসেবে যেমন কার্যকর তেমনি তা বাহ্যিক ব্যবহারেও এটি খুব গরুত্বপূর্ন। ঘৃতকুমারীর রস দিয়ে অনেকে রাস্তাঘাটে বা ফুটপাতে শরবত বানিয়ে বিক্রি করে, সময় ও সুযোগ পেলে কে না এই শরবত পান করে। অত্যন্ত উপকারী এই শরবত অনেকে নিজ বাসায়ও বানিয়ে খান। এবং এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীকে সালাদ হিসেবে খেয়ে এবং ত্বক ও চুলে ব্যবহার করে আপনিও দারুণ উপকৃত হতে পারেন। এই প্রতিবেদনে ঘৃতকুমারীর কয়েকটি অনন্য উপকারিতার কথা তুলে ধরা হলো।
এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীতে ভিটামিন ও খনিজ :
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজের এক সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন-এ,সি,ই, ফলিক অ্যাসিড, কোলিন, বি-১, বি-২, বি-৩ (নিয়াসিন) ও ভিটামিন বি-৬ এর দারুণ উৎস এটা। অল্পসংখ্যক উদ্ভিদের মধ্যে ঘৃতকুমারী একটি যাতে ভিটামিন বি-১২ আছে। প্রায় ২০ ধরনের খনিজ আছে ঘৃতকুমারীতে। এর মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাংগানিজ।
শারীরিক, মানসিক চাপ ও রোগ প্রতিরোধ :
ঘৃতকুমারী দারুণ অ্যাডাপ্টোজেন। শরীরের প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে বাহ্যিক নানা চাপ ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালনকারী উপাদানকে অ্যাডাপ্টোজেন বলা হয়ে থাকে। ঘৃতকুমারী দেহের অভ্যন্তরীণ পদ্ধতির সঙ্গে মিশে গিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় করে তোলে, এবং দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে। শারীরিক ও মানসিক চাপ মোকাবিলার পাশাপাশি পরিবেশগত দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেহকে সুরক্ষা দিতে পারে ঘৃতকুমারী।
এলোভেরা হজমে সহায়ক :
হজমের সমস্যা থেকেই শরীরে অনেক রোগ বাসা বাঁধে। তাই সুস্বাস্থ্যের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে পরিপাক বা হজমের প্রক্রিয়াটি ঠিকঠাক রাখা। পরিপাক যন্ত্রকে পরিষ্কার করে হজম শক্তি বাড়াতে ঘৃতকুমারী অত্যন্ত কার্যকর। ঘৃতকুমারীর রস পান করার দারুণ ব্যাপার হলো, এটা কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়ারিয়া দুই ক্ষেত্রেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। পরিপাক ও রেচন যন্ত্রকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মুক্ত রাখে বলে, ঘৃতকুমারীর রস পান করলে পেটে ক্রিমি হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না, কিংবা ক্রিমি থাকলেও সেটা দূর হয়।
দূষণ মুক্তি :
ঘৃতকুমারীর রস খুবই আঠালো। এমন উদ্ভিদের আঠালো রস পানের একটা দারুণ ব্যাপার হলো খাদ্যনালীর ভেতর দিয়ে দেহের ভেতরে প্রবেশের সময় থেকেই পুরো পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করতে করতে যায়। এই রস দেহের অভ্যন্তরীণ নানা টক্সিন বা দূষিত উপাদান শুষে নিয়ে মলাশয় দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে দেহকে ভেতর থেকে দূষণ মুক্ত করতে ঘৃতকুমারীর তুলনা নেই।
অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ :
সুস্বাস্থ্যের জন্য খাবারে অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ খাদ্য ও অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে ৮০ ভাগ অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ খাবার, ও ২০ ভাগ অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদেরা। ঘৃতকুমারী এমন খাবার যা অ্যালক্যালাইন তৈরি করে। কিন্তু আজকাল নগরজীবনে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যে প্রায়শই অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগতে হয়। ফলে অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির ভোগান্তি থেকে বাঁচতে, মাঝে মধ্যে ঘৃতকুমারীর রস বা জেলি খাবেন।
এলোভেরা ত্বক ও চুলের মহৌষধ :
আপনারা নিশ্চই অনেক প্রসাধনীর গায়ে এলোভেরা সমৃদ্ধ লেখাটি দেখতে পেয়েছেন।
আধুনিক প্রসাধনী সামগ্রীর অন্যতম কাঁচামাল এই অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী। ত্বক ও চুলের জন্য এটা দারুণ উপকারী। এটা ত্বকের নানা ক্ষত সারিয়ে তুলতে কার্যকরী। রোদে পোড়া, ত্বকে ফুসকুড়ি পড়া ও পোকার কামড়ের মতো, বাহ্যিক সমস্যাগুলো সারিয়ে তুলতে পারে এটা। এমন বাহ্যিক ক্ষতে ঘৃতকুমারীর রস মাখলেও ব্যথার উপশম হবে, কেননা বেদনানাশক হিসেবেও এটা অতুলনীয়। চুল পরিষ্কার করতে, চুলে পুষ্টি জোগাতে এবং চুল ঝলমলে উজ্জ্বল রাখতে ঘৃতকুমারীর রস অত্যান্ত কার্যকরী।
অ্যামাইনো ও ফ্যাটি অ্যাসিড :
মানব দেহের নানা প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড। এমন ২২টি অ্যামাইনো অ্যাসিডকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, এর মধ্যে ৮টিকে অত্যাবশ্যক। ঘৃতকুমারীতে শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক এই ৮টি অ্যামাইনো অ্যাসিডই আছে। আর এতে মোট অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে ১৮ থেকে ২০ ধরনের। এ ছাড়া নানা ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডেরও দারুণ উৎস এই ঘৃতকুমারী।
এলোভেরা ওজন কমাতে সহায়ক :
হজমে সহায়তা এবং শরীরকে দূষণমুক্ত করার মধ্য দিয়ে, ঘৃতকুমারী আপনার স্বাস্থ্যের যে প্রাথমিক উন্নতি ঘটায় তার অবধারিত ফল হলো ওজন ঠিকঠাক থাকা। এমনিতে ওজন কমানো নিয়ে অনেক সমস্যায় থাকলেও নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস পান করলে আপনার ওজনের সমস্যা অনেক কমে আসবে। এ ছাড়া শরীর দূষণমুক্ত রাখতে পারার কারণে আপনার কর্মশক্তি বেড়ে যাবে, এ কারণেও আপনার ওজন কমবে।
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী কোথায় পাবেন :
এজন্য নিজের প্রয়োজনে স্বল্পাকারে, বাসার সামনে বা ছাদে ফুলের টবে এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী চাষ শুরু করতে করতে পারেন। কারন, সবসময় বাজারে নাও পেতে পারেন। আবার বিভিন্ন সুপারশপে এলোভেরার পাউডার পাওয়া যায়, এগুলো কেনার সময় অবশ্যই সতর্ক হয়ে কিনতে হবে।
ভৈষজ্য ধনন্তরী নামক আইডি থেকে আপনি চাইলে, এলোভেরা পাউডার কিনে নিতে পারবেন পেজ ।