সাধারন জ্ঞানস্বাস্থ্য টিপস

ডায়বেটিস হলে কি করবেন ? বিস্তারিত জানতে লেখাটি পড়ুন।

বর্তমানে দেশে ডায়বেটিক রোগী এমন আকার ধারন করেছে। যা রীতিমত আতংক তৈরী করার জন্য যথেষ্ট। এতে মানুষের উদাসীনতা দেখে, স্বাস্থ্যবিদগনও উদ্বিগ্ন। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে ডায়বেটিস নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সে জানতেও পারছেনা বহু আগে থেকেই সে এরোগে আক্রান্ত! যখন পরিক্ষায় ধরা পড়ে, ততক্ষনে বহু দেরী হয়ে যায়। বিধায়, আজীবন ঔষধকে সঙ্গী হিসাবে বরণ করতে হয়।

ডায়বেটিসের ধরন :

ডায়বেটিস সাধারনতঃ ২ ধরনের হয়। প্রথম প্রকার হলো কিডনীর জন্য বহুমুত্র। এতে রোগীর বার বার প্রস্রাব হলেও শর্করা বা sugar বের হয়না। এই জাতীয় ডায়বেটিকের নাম ইনসিপিডাস।
আরেকটি হলো – শরীরের শর্করা জাতীয় খাদ্য, হজম হয়ে যে গ্লকোজে পরিনত হয়। তা শরীরে এবজর্ব Absorb না হয়ে, বেশীর ভাগ অংশ প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয়। তাকে ডায়বেটিস মেলিটাস বলা হয়।

সাধারনতঃ শর্করা দেহের রক্তে থাকে, কিন্তু মুত্রে থাকেনা। দেহের গ্লকোজ এভাবে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে গেলে, শরীর ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ে। রক্তের মধ্যেও গ্লকোজ বৃদ্ধি পায়। গ্লকোজ সঠিকভাবে দেহে শোষিত না হয়ে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। Pancreas এ Islets of langerhans নামে এক ধরনের কোষ আছে। এই জীবকোষ থেকে Insulin নামক এক প্রকার রস বের হয়। এই রসের প্রভাবে শরীরে সঠিকভাবে গ্লকোজ শোষিত হয়ে আমাদেরকে স্বাভাবিক রাখে। কিন্তু এই জীবকোষগুলির কর্মক্ষমতার অভাব হলে, Insulin নিঃসরন কম হয়, ফলে Glucose শোষিত না হয়ে, মুত্রে নির্গত হয়। এর ফলেই ডায়বেটিসে আক্রান্ত হয়।

ডায়বেটিস কার হয়?

ডায়বোটিস সাধারনতঃ অলস প্রকৃতির মানুষ, মেদপ্রধান, অতিরিক্ত খাদক, রাক্ষুসে টাইপের অদম লোকদের বেশী হয়। যারা পরিশ্রম করতে পারেনা, কিন্তু মানসিক চাপ বেশী বহন করে। এদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়া আশংকা বেশী থাকে। উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের মাঝেই এর প্রভাব বেশী। বংশগত কারন না থাকলে, গরীব পরিশ্রমী, বা দিনমজুরদেরকে তেমন দেখা যায়না। আমি অন্তত ৮-১০ টি হাসপাতাল ঘুরে দেখেছি এর বাস্তবতা। অন্তত ২০০ জন রোগীর সাথে কথা বলে, তাদের পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে জেনেছি। এর মধ্যে মাত্র ৩ জন রোগী পেয়েছি, যারা পরিশ্রমী এবং নিন্ম আয়ের মানুষ। ইতিহাস জেনে নিশ্চিত হলাম, তাদের ৩ জনেরই বংশগত ডায়বেটিস।

ডায়বেটিসের লক্ষণ :

এরোগ ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। ঘন ঘন পিপাসা ও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। প্রচন্ড ক্ষুধা পায়। রোগীর পেশী শীর্ণ হতে থাকে। যতই ভাল খাওয়া দাওয়া হোক, এগুলো কাজে আসেনা। খাদ্যশক্তিগুলো সব বের হয়ে যায়। চামড়া খসখসে হতে দেখা যায়। চুলগুলো শুকনো ও পাতলা দেখা যায়। নখগুলো সহজে ভেঙ্গে যায়। ঠোঁট শুকনো থাকে, দাঁত ক্ষয়ের মতো দেখা যায়। ঠোঁটের কোণায় ঘা থাকতে পারে। প্রায়ই কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থাকে। দৃষ্টিশক্তি ও যৌনশক্তি ক্রমশঃ কমতে থাকে। চুলকানী, ফোঁড়া, ব্রণ, বা কার্বাঙ্কল হতে দেখা যায়। এবং তা সারতে চায়না। রক্তে Acetone বেশী হলে, রোগী তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তাকে কোমা ডায়বেটিক বলে। এটা হলে রোগী মারাও যেতে পারে। অনেক সময় তা থেকে রোগীর যক্ষাও হতে পারে।

এসব লক্ষন ছাড়াও পেশীতে ব্যথা হতে পারে। সবগুলো লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়না। আবার কারো কারো কোন লক্ষণ প্রকাশ না পেয়েও এরোগ ধরা পরতে পারে।
তাই মাঝে মধ্যে প্রস্রাব অথবা রক্তে সুগারের পরিমান জেনে নেয়া ভাল। নিশ্চিত হওয়া যায়, ডায়বেটিক আছে কিনা।

ডায়বেটিক এর উপসর্গ :

  • কোমা ডায়বেটিক – ( সংজ্ঞাহীনতা )
  • রেটিনোপ্যাথি ডায়বেটিক – ( কিডনীর রোগ, রক্তপাত )
  • নেক্রোপ্যাথি ডায়বেটিক – ( কিডনীর রোগ )
  • নিউরোপ্যাথিক ডায়বেটিক – ( নিউরাইটিস বা নার্ভের রোগ )
  • হৃদপিন্ড বা ধমনীর রোগ।
  • বিভিন্ন জীবাণু সংক্রমনজনিত রোগ – যেমন, যক্ষা, কার্বাঙ্কল, গ্যাংগ্রিন।
  • ছত্রাক জনিত রোগ।

ডায়বেটিক এর চিকিৎসা :

ডায়বেটিক রোগ নির্মুল হয়না। তবে তাকে নিয়ন্ত্রন করে, দীর্ঘজীবন লাভ করা যায়। ঔষধ তো নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে সেবন করতেই হবে। সাথে শারীরিক পরিশ্রম, ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অবশ্যই করতে হবে।

ইনসুলিন Insulin injection :

এই ইনজেকশনের কাজ হলো সাময়িক। প্রস্রাবে যদি Glucose দেখা দেয়। তাহলে insulin প্রয়োগের ফলে, গ্লকোজকে শরীরে শোষন করে। এটাকে সাময়িক চিকিৎসা বলা যায়।

ডায়বেটিক চিকিৎসায় সব সময় নিয়মিত রক্তে সুগারের পরিমান ও প্রস্রাবে গ্লকোজের পরিমান টেস্ট করতে হয়। এতে অনাকাঙ্কিত বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়।

ডায়বেটিস টেস্ট diabetic test :

প্রস্রাব Urine test.
FBS ( Fasting blood sugar).
RBS ( Random blood sugar ).

ডায়বেটিসের খাদ্য :

চিনি, আলু, চিরা, মুড়ি, গুড়, বা মিষ্টান্ন খাবার বর্জন করতে হবে। Diabetic এর শ্রেষ্ঠ খাদ্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। সুগার ফ্রি ফল ও শাকসব্জী বেশী খেতে হবে।

ভাত খাবেন সামান্য। সুজি বা আটার রুটি ভাতের পরিবর্তে খেলে ভাল। ছানা, মাছ, ডিমের ঝোল, দুধ, টক দই, প্রভৃতি খেতে হবে নিয়ম মাফিক। তেল বা ঘি না খেয়ে মাখন খেতে পারেন।

এছাড়াও ডায়বেটিস সমিতি কতৃক, যে খাদ্য তালিকা দেয়া হয়। তা অনুসরন করলে, জীবন পরিচালনা অত্যন্ত সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত হয়। শারীরিক পরিশ্রম যতটা সম্ভব! একটু বেশী করে রুটিন করে নিবেন। এতে ঔষধের কাজেও সহায়ক হবে। মাসে এক থেকে দুইবার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এবং টেস্ট করতে হবে, বর্তমান পরিস্থিতি কী!

ঘন ঘন প্রস্রাব হলে কি করবেন?

ঘন ঘন প্রস্রাব বা বারবার বাথরুমে যাওয়া এই উপসর্গ দেখা দিলে সবাই শঙ্কিত হন। তার মানে কি ডায়াবেটিস হয়েছে? বয়স্ক ব্যক্তিদের বারবার বাথরুম যাওয়ার প্রবণতা বেশি। গর্ভবতী নারীরাও এ সমস্যায় ভোগেন। জেনে রাখুন, ডায়াবেটিসের একটি অন্যতম লক্ষণ হলেও ঘন ঘন বা অধিক প্রস্রাব অন্যান্য সমস্যায়ও হতে পারে।

একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি দিনে চার থেকে আটবার মূত্রত্যাগ করে থাকেন। পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, দিনে আটবারের বেশি প্রস্রাব করলে তাকে ঘন ঘন প্রস্রাব হিসেবে গণ্য করা হয়।বিভিন্ন বয়সে প্রস্রাবের স্বাভাবিক পরিমাণ বিভিন্ন। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির প্রস্রাবের পরিমাণ ২৪ ঘণ্টায় তিন লিটার বা এর অধিক হলে তা অস্বাভাবিক এবং একে পলিইউরিয়া বলা হয়। ঘন ঘন প্রস্রাব বা অধিক পরিমাণ প্রস্রাব উপসর্গ দুটো আলাদা। অনেক ক্ষেত্রেই এ দুটো একসঙ্গে দেখা যায়। কেননা প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে গেলে প্রস্রাব ঘন ঘন হয়ে থাকে।অনেক সময় ঘন ঘন প্রস্রাবের মূল কারণ হলো শুধু অধিক বা অস্বাভাবিক পরিমাণে পানি বা পানীয় গ্রহণ। একে সাইকোজেনিক পলিডিপসিয়া বলা হয়।কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কারণেই বেশি প্রস্রাব হতে পারে।

যেমন অতিমাত্রায় পানীয় বা অ্যালকোহল সেবন, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় গ্রহণ, শীতকালে যখন ঘামের পরিমাণ কমে যায়, গর্ভাবস্থায়, প্রস্রাব বৃদ্ধিকারক ওষুধ সেবন, ১০ হাজার ফুট ওপরে ভ্রমণের সময়, অধিকমাত্রায় ভিটামিন সি ও বি২ গ্রহণ ইত্যাদি।ঘন ঘন বা অধিক প্রস্রাবের কারণ:-ডায়াবেটিস ছাড়া অন্য যেসব কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, তা হলো:মূত্রনালি বা মূত্রথলির সংক্রমণ।

গর্ভকালীন প্রথম ও শেষ দিকে। বয়স্ক পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থির সমস্যায়।স্ট্রোক ও অন্যান্য স্নায়ুরোগ, মূত্রথলির স্নায়ুবিকলতা, মূত্রথলির ক্যানসার ইত্যাদি। মস্তিষ্কের টিউমার, বিকিরণ, সার্জারি, আঘাত, কিডনি রোগ ইত্যাদি কারণে মূত্র নিয়ন্ত্রক এডিএউচ হরমোনের অভাব বা অকার্যকারিতা দেখা দেয়।থাইরয়েড হরমোন বা করটিসল হরমোনের আধিক্য।রক্তে ক্যালসিয়াম বা পটাশিয়ামের তারতম্য।

ঘন ঘন প্রস্রাব বা অধিক পরিমাণ প্রস্রাব কোনো রোগ নয় বরং রোগের উপসর্গমাত্র। এর কারণে শরীরে পানিশূন্যতা, পানির ভারসাম্যহীনতা, লবণের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ সমস্যায় আক্রান্ত হলে অবশ্যই ডায়াবেটিস বা অন্যান্য সমস্যা আছে কি না, তা পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X