সাধারন জ্ঞানস্বাস্থ্য টিপস

আধুনিক চিকিৎসা বনাম কুসংস্কার! গুরুত্বপুর্ন তর্ক যুদ্ধের অবসান।

সাধারন মানুষের কিছু ভুল ধারনা নিয়ে, প্রায়ই অনেক রোগী তার ডাক্তারকে প্রশ্ন করেন। এটা হলে কি বা ওটা হলে কি? এসব শুনতে শুনতে ডাক্তাররাও অনেক সময় বিরক্ত হয়ে যান। মানুষ এগুলো পায় কোথায়? তাই এসব কিছু মাথায় রেখে আজকের লেখা আধুনিক চিকিৎসা বনাম কুসংস্কার! গুরুত্বপুর্ন তর্ক যুদ্ধের অবসান।

কোমর ব্যথা মানে কিডনি রোগ ?

কিডনি রোগে প্রস্রাব কমে যায়, খাওয়ার রুচি কমে যায়, বমি বমি লাগে, মুখ ফুলে যায়।
কোমর ব্যাথা বিভিন্ন কারনে হতে পারে। বাত, হাড় ক্ষয়জনিত কারন, নিউরোপ্যাথিক কিছু সমস্যার জন্যও কোমর ব্যাথা হয়। এজন্য কিছু টেস্ট এর প্রয়োজন হতে পারে। একজন নিউরো স্পেশালিস্ট ডাক্তার দেখালে, হয়ত সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে।

ঘন ঘন প্রস্রাব মানেই ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ?

ডায়াবেটিস হলে প্রথম অনুভূতি হল- এতো খেলাম, তবুও কেন শক্তি পাইনা, এছাড়া ওজন কমে যায়, মুখে দুর্গন্ধ হয়, ঘা শুকাতে চায়না। টোঁঠের কোণায়ও ঘা হতে পারে, যা সহজে ভাল হতে চায়না। জয়েন্টে প্রচুর ব্যাথা হতে পারে, ঔষধ খেলেও তেমন উপকার হতে চায়না। চেহারায় একটা ফ্যাকাশে ভাব চলে আসে। RBS টেস্ট করালেই সঠিকটা জানা যাবে।
তাছাড়া ঘন ঘন প্রস্রাব এর অন্যান্য কারনগুলো হতে পারে, প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বৃদ্ধি পাওয়া, জিংক এর অভাবেও প্রস্রাব একটু বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রথমে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অথবা ইউরোলজিস্ট ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসা নেয়া উচিত।

ঘাড়ে ব্যথা মানেই প্রেসার!

প্রেসার বাড়লে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন উপসর্গ পাওয়া যায় না! একটু অস্বস্তিকর অনুভুতি হয় মাত্র। তাই প্রেসার চেক না করে বলা প্রায় মুশকিল। তবে অবহেলাও করা যাবেনা। সব ঠিক থাকলে, বুঝতে হয়ত ঘুমের ব্যাঘাত থেকে ব্যাথার সৃস্টি।

বুকের বামে ব্যথা মানে হার্টের রোগ!

হার্টের রোগে সাধারণত বুকে ব্যথা হয় না। হলেও বামে নয়তো বুকের মাঝখানে ব্যথা হয়। হার্টের সমস্যায় সাধারণত বুকের মাঝখানে চাপ চাপ অনুভূতি হয়, মনে হয় বুকের মাঝখানটা যেন কেউ শক্ত করে ধরে আছে। ভারী কোন কিছু দিয়ে চাপ দেয়ার মত অনুভুত হয়। তবে কোনটাই অবহেলা করা উচিত হবেনা। প্রথমতঃ এমনটা হলে, ডাক্তারকে বুঝিয়ে বলতে হবে। গ্যাস্ট্রিক থেকেও বুকে ব্যাথা হয়। ফুসফুসে ইনফেকশনের কারনেও ব্যাথা হতে পারে।

মিষ্টি খেলেই ডায়াবেটিস হয় ?

ডায়াবেটিস হরমোনাল অসুখ। অগ্ন্যাশয় ঠিকমত কাজ না করলে ডায়াবেটিস হয়। তাই মিষ্টি খাওয়ার সাথে এই রোগ হবার সম্পর্ক নেই। কিন্তু ডায়াবেটিস হয়ে গেলে মিষ্টি খেতে হয় না। কারন এতে সুগার লেভেল বেড়ে গিয়ে মারাত্মক আকার ধারন করে। ঔষধ চালিয়ে যাবার পরও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকেনা। তাই ডায়বেটিস নিশ্চিত হওয়ার পর, মিষ্টিজাত যেকোন খাবার পরিহার করা উচিত। তবে ডায়বেটিস যদি কখনও নিল হয়ে যায়, তাহলে একটা মিষ্টি বা চকলেট অথবা সামান্য চিনি খেয়ে সুগার লেভেল স্বাভাবিক করতে হয়। অন্যথায় মৃত্যু ঝুঁকি থাকতে পারে।

প্রেগন্যান্সিতে বেশি পানি খেলে পায়ে পানি আসে ?

প্রেগন্যান্সিতে প্রোটিন কম খেয়ে, কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে পায়ে পানি আসে। তাই প্রোটিন বেশি বেশি খেতে হয়। আর পানি তো অবশ্যই পান করা উচিত। অনেকের ধারনা, এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং করাকালীন বেবির (৬মাসের আগে পানিও খাওয়ানো যায় না একারণে) ডায়রিয়া হলে, মা স্যালাইন খেলেই বেবিরও চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
আর সঠিক হলো, মা খেলেই বাচ্চার চাহিদা পূরণ হয় না। বেবিকেও স্যালাইন খাওয়াতে হয়। এবং চিকিৎসা নিতে হয়।

আবার কেউ বলেন- দাঁত তুললে চোখের আর ব্রেইনের ক্ষতি হয়।
আর সঠিক হলো- দাঁত তোলার সাথে চোখের আর ব্রেইনের কোনো সম্পর্ক নেই। দাঁত, চোখ, মাথার নার্ভ সাপ্লাই সম্পূর্ণ আলাদা।
আরেকটি প্রশ্ন করেন অনেকে- মাস্টারবেশন করলে চোখের জ্যোতি কমে যায়!
এর উত্তরে বলতে হয়, ভিটামিন এ জাতীয় খাবার না খেলে চোখের জ্যোতি কমে যায়। তবে মাস্টারবেশনে পেনাইল টিস্যুর মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এমনকি নার্ভেও এর এফেক্ট পড়ে।

সমাজে একটা কুসংস্কার আছে- টক/ ডিম/ দুধ খেলে ঘা দেরীতে শুকায়।
আসলে কিন্তু, টক বা ভিটামিন সি, ডিমের সাদা অংশ এবং দুধ খেলে ঘা তাড়াতাড়ি শুকায়।

অস্বাভাবিক আচরন, ভাংচুর, পাগলামি মানেই জ্বিন ভুতে ধরা ?

প্রিয় পাঠক! এটা বাইপোলার ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, হ্যালুসিনেশন। এর জন্য অবশ্যই সাইকোটিক ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সঠিক চিকিৎসা পেলে রোগী সুস্থ্য হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন : এন্টিবায়োটিক সম্পর্কে যা জানা দরকার | এবং আমাদের ভবিষ্যত কোন দিকে ?

আগেকার কিছু মহিলাদের ধারনা- প্রেগন্যান্ট মহিলা আয়রণ, ক্যালসিয়াম এসব খেলে বাচ্চা বড় হয়ে যায়। তাই গাইনী ডাক্তার সিজার করার জন্য এগুলা প্রেসক্রাইব করে।
সত্য হলো- প্রেগন্যান্ট মহিলা আয়রণ, ক্যালসিয়াম না খেলে গর্ভস্থ বেবির নিউরাল টিউব ডিফেক্ট হয়। এবং প্রসুতি মা গর্ভকালীন রক্তস্বল্পতায় ভূগেন। এর ফলে নবজাতক শিশুও অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগতে থাকে। আবার আরেকটি কথা শোনতে পাই, প্রেগন্যান্সিতে সাদাস্রাব হলে ফ্লুইড কমে যায় ?
নাহ্ White discharge এবং Amniotic fluid সম্পূর্ণ আলাদা দুটো ফ্লুইড। একটার সাথে আর একটার কোনো সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন : লিভার ভাল রাখার উপায় | সুস্থ্যতার জন্য পড়ুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X