ডায়াবেটিস নির্ণয় ৩ পদ্ধতি! সবার জেনে রাখা দরকার
ডায়বেটিস বংশগত রোগ না হলেও। পিতামাতার এরোগ থাকলে, সন্তানেরও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ৪০ বছর বয়সের পর যারা ডায়বেটিসে আক্রান্ত হয়। তাদের অনেকেই অপুষ্টিজনিত স্থুলকায় ব্যাক্তি। পরিশ্রমিদের তুলনায় বসে থাকা, ও গ্রামের লোকদের তুলনায় শহরের মানুষের, ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী থাকে। যাক ডায়বেটিস নির্ণয় নিয়ে লেখাটা পড়ুন, কাজে আসবে।
ডায়াবেটিস নির্ণয় ৩ টি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ঃ
- OGTT.
- FBS.
- RBS.
আমরা জানি, কারো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা খালি পেটে ৭.০ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশী হলে অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ শরবত খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে ১১.১ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশী হলে আমরা তাকে ডায়াবেটিস বলে থাকি।
RBS / OGTT / FBS
RBS (রেন্ডম ব্লাড সুগার) পরীক্ষা করে গ্লুকোজের মাত্রা ১১.১ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশী পেলে সম্ভবত তার ডায়াবেটিস আছে। ৫.৫ মিলিমোল/লিটার থেকে ১১.১ মিলিমোল/লিটার এর ভিতরে থাকলে ডায়াবেটিস অনিশ্চিত। ৫.৫ মিলিমোল/লিটার এর নীচে থাকলে ডায়াবেটিস নেই বলে ধরে নিতে হবে। প্রথম দুই ক্ষেত্রে নিশ্চিত হবার জন্য OGTT পরীক্ষা করতে হবে।
এক্ষেত্র FBS পরীক্ষা RBS এর চেয়ে অনেক বেশী ইঙ্গিতবহ। কারো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সকালে খালি পেটে ৭.০ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশী হলে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় ডায়াবেটিস হয়েছে। যদি, FBS ৬.১-৬.৯ মিলিমোল/লিটার ভিতরে থাকে তাহলে IFG হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। অর্থাৎ, ঐ ব্যাক্তির ডায়াবেটিস হয়নি কিন্তু হওয়ার পথে।
গ্লকোজের মাত্রা
ডায়াবেটিস নির্ণয় করার জন্য বিশ্ব স্বীকৃত পদ্ধতি হল OGTT । এক্ষেত্রে সকালে খালি পেটে একবার রক্ত দিতে হয় এবং ২৫০ মিলিলিটার পানিতে ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে আবার রক্ত দিতে হয়। এভাবে, খালি পেটে অথবা গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে – যে কোনটার রিপোর্টে গ্লুকোজের মাত্রা বেশী পাওয়া গেলে তাকে ডায়াবেটিস হিসেবে গন্য করতে হবে।
সকালে খালি পেটে ৭.০ বা তার বেশী হলে অথবা গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘন্টা পর ১১.১ বা তার বেশী হলে ডায়াবেটিস আছে। সকালে খালি পেটে ৭.০ এর কম হলে এবং গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘন্টা পর ৭.৮-১১.১ এর কম হলে IGT। সকালে খালি পেটে ৬.১-৭.০ এর কম হলে এবং গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘন্টা পর ৭.৮ এর কম হলে IFG। সকালে খালি পেটে ৬.১ এর কম হলে এবং গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘন্টা পর ৭.৮ এর কম হলে ডায়াবেটিস নেই।
এখানে, IGT এবং IFG কে প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের পূর্বাবস্থা বলা হয়। অর্থাৎ, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা IGT এবং IFG পর্যায়ে থাকলে ঐ ব্যক্তির সহসাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা আছে।
মনে রাখবেন, গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্ত পরীক্ষা করলে তা ১৫% কম বা বেশী দেখাতে পারে। গ্লুকোমিটার দিয়ে আমরা সরাসরি লাল রক্ত থেকে গ্লুকোজ মাপি। কিন্তু প্যাথলজী সেন্টার গুলোতে রোগীর রক্ত থেকে রস (প্লাজমা) আলাদা করে। সেখান থেকে গ্লুকোজ পরীক্ষা করে। তাই এটি অনেক বেশী নির্ভুল হয়।
বিভিন্ন ডায়াবেটিক জটিলতার সাথে সম্পর্ক যুক্ত যেমনঃ
- ১. হৃদরোগ,
- ২. কিডনীর রোগ ,
- ৩. চোখের রোগ,
- ৪. পায়ের ক্ষত ইত্যাদি।
GCTঃ গর্ভকালীন মায়েদের ডায়াবেটিস আছে কিনা তা জানার জন্য GCT নামে একটি পরীক্ষা পদ্ধতি আছে। দিনের যে কোন সময়ে (খালি বা ভরা পেট যে কোন ভাবে) মা’কে ৫০ গ্রাম গ্লুকোজের শরবত খাওয়ানোর ১ ঘণ্টা পরে, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ৭.৮ মিলিমোল/লিটার বা তার চেয়ে বেশী হলে, তাকে GCT পজিটিভ হিসেবে ধরে নিতে হবে। GCT পজিটিভ হলে অবশ্যই OGTT পরীক্ষা করতে হবে।
ডায়বেটিক রোগীদের লক্ষন সবসময় প্রকাশ পায়না, কিছু লক্ষনের ব্যাপারে বলতে পারি, যেকোন কাটা ঘা দেরীতে শুকানো। ঘন ঘন খিদে, হঠাৎ দূর্বল হয়ে পড়া, নিয়ন্ত্রনহীন প্রশ্রাব, টোটের কোণায় ঘা, গোড়ালি ব্যাথা, বিভিন্ন অঙ্গে ব্যাথা হতে পারে।