হারবাল

বাসক নিম কাঁটানট এর উপকারীতা! তিনটি ঔষধী গাছ কি

একসময় আমাদের বাড়ির চারপাশে, বা রাস্তার ধারে, অসংখ্য গাছগাছালির দেখা পেতাম। অনেক ঝোপঝাড়ের কাছে যেতেও ভয় হতো। তখন হয়ত জানতামনা, এগুলো সবই ছিল মানুষকে জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্তির দাওয়াই। আপনি বাসক নিম কাঁটানট এর উপকারীতা জানলে অবাক হবেন!

কিন্তু যে যেভাবে পারছে কেটে উজার করেছে। কেউ চুলার জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করেছে, কেউ এমনিতেই কেটে আনন্দ পেয়েছে। তবে যাই হউক, এখন শান্তি! মানে কেটে ফেলার মত আর নাই। যা ছিল, এর মধ্যে কয়েকটার ঔষধীগুন তুলে ধরার চেস্টা করবো।

বাসক এর উপকারিতা

বাসক পাতার ১-২ চামচ রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিলিয়ে খেলে, শিশুর সর্দি-কাশির উপকার পাওয়া যায়।
এই পাতার রস গোসলের আধা ঘণ্টা আগে মাথায় মাখলে উকুন মরে যায়। এছাড়া আমবাত ও ফোঁড়ার প্রাথমিক অবস্থায় বাসক পাতা বেটে প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।

বুকে কফ এবং এর জন্য শ্বাসকষ্ট হয় বা কাশি হয়, তখন বাসক পাতার রস ১-২ চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।
প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রণা থাকলে, বাসকের ফুল বেটে ২-৩ চামচ এবং মিছরি মিলিয়ে, সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।

জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতো করে, ১০০ মিলিলিটার পানিতে ফুটিয়ে ২৫ মিলিলিটার থাকতে নামিয়ে তা ছেঁকে নিন। এরপর দিনে ১০-২০ মিলি ২ বার করে খাবেন। তাতে জ্বর এবং কাশি দুটোই চলে যাবে।
বাসকের কচিপাতা ১০-১২টি ও এক টুকরো হলুদ, এক সঙ্গে বেটে দাদ বা চুলকানিতে লাগালে কয়েক দিনের মধ্যে তা সেরে যায়।

আরও পড়ুন – ফিটকিরির উপকারীতা কি

বাসক পাতা বা ফুলের রস ১-২ চামচ মধু বা চিনিসহ প্রতিদিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়।
যাদের হাঁপানির টান আছে তারা বাসক পাতা শুকনো করে, ওই পাতা বিড়ি বা চুরুটের মতো পাকিয়ে, তার সাহায্যে ধোঁয়া নিলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়।

এছাড়া বাসকের পাতা সবুজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এবং পাতা থেকে হলদে রং পাওয়া যায়। বাসক পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে, যায় ফলে ছত্রাক জন্মায় না। এবং পোকামাকড় ধরে না বলে ফল প্যাকিং এবং সংরক্ষণ করার কাজেও ব্যবহৃত হয়।

নিমের উপকারীতা :

• এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই এবং ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য খুবই উপকারী।
• নিমপাতা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক (ফাঙ্গাস) বিরোধী। তাই ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের আক্রমণের হাত থেকে, ত্বককে সুরক্ষিত করতে নিমপাতা খুবই কার্যকরী। ব্রণর সমস্যা থেকে দ্রুত নিস্তার পেতে, নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন।
• ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে নিয়মিত নিমপাতার সঙ্গে, কাঁচা হলুদ ভাল করে বেটে মেখে দেখুন। খেয়াল রাখতে হবে, মিশ্রণে নিমপাতার চেয়ে হলুদের পরিমাণ যেন কম হয়। তবে হলুদ ব্যবহার করার পর কয়েক ঘণ্টা রোদ এড়িয়ে চলাই ভাল।

আরও পড়ুন- পেটে ব্যথার ঔষধ

• দাঁতের জন্য নিমের গুঁড়া খুবই উপকারী। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে আর দাঁতের ফাঁকে জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করতে নিম বেশ কার্যকরী।
• কেটে-ছড়ে গেলে বা পুড়ে গেলে ক্ষত স্থানে নিম পাতার রস ভেষজ ওষুধের মতো কাজ করে।
• নিম পাতা গুঁড়ো ফেস প্যাক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
• মাথার ত্বকের চুলকানির সমস্যায় নিমপাতার রস খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। শুধুমাত্র চুলের নয় ত্বকের যে কোনও চুলকানির সমস্যায়, নিমপাতা বেটে লাগাতে পারলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
• গায়ের দুর্গন্ধ বা ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে, নিমপাতার রস খুবই কার্যকরী একটি উপাদান।
• নিয়মিত সামান্য পরিমাণে নিমপাতা খেতে পারলে, কোষ্ঠকাঠিন্য-সহ লিভারের সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে।

কালোমেঘ এর উপকারীতা :


চিরতার মতো তিতা স্বাদের কালোমেঘের পুরো গাছটিই। ঔষধি গুণে ভরা। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, কালোমেঘে রয়েছে রজন জাতীয় উপাদান। কালোমেঘিন, তিক্ত কেলাসিত ডাইটারপেন ল্যাকটোন। ডাইটারপেন, গ্লকোসাইড ডি অক্সিএন্ড্রোগাফোলয়েডস, ইপি জেনিল ইথার, অন্যান্য ফ্লাডোনয়েড ও ফেনলসহ বহু উপাদান। পাতায় রয়েছে বেট সিটোস্টেরল গ্লকোসাইড, প্যানিকোলাইড ইত্যাদি। মূলে রয়েছে এন্ডোগ্রাফিন ও প্যানিকোলিন আলপাসিটোস্টেরল ইত্যাদি।

বিদেশে কুইনাইনের বিকল্প হিসেবে কালোমেঘের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশে স্মরণাতীতকাল থেকেই লোকজ চিকিৎসা ক্ষেত্রে কালোমেঘ অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং গ্রাম্য কবিরাজ হাকীম ও হোমিওপ্যাথিক জিকিৎসকরা বিভিন্ন রোগ চিকিৎসায় এটি অনেক ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ করে যকৃতের বিভিন্ন রোগের অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য উপাদান হিসেবে কালোমেঘের ব্যবহার অনেক। এছাড়া কালোমেঘ রক্ত পরিষ্কার পাকস্থলীর শক্তির্বধক, রেচক, কৃমিনাশক, জ্বর ও পেটের যাবতীয় রোগ যেমন: অজীন, অতিসার বা উদরাময়, রক্ত আমাশায়, ঘা ও খোস-পাঁচড়া নিবারক।

কাঁটানট এর উপকারীতা :

রক্ত আমাশয় – কাঁটানটের শিকড় ২৫ গ্রাম পরিমাণ ২/৩ টি গোলমরিচের সাথে, ঠাণ্ডা জলে বেটে কিছু দিন সেবন করলে রক্ত আমাশয় নিরাময় হয়।
অর্শে – বলির ওপর কাঁটানটের পাতা বেটে প্রলেপ দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
আধকপালে মাথাব্যাথায় – একটুকরো কাঁটা নটের শিকড় ও ২/৩ টি গোল মরিচ, একসাথে বেটে কপালে লাগালে আধকপালে নিরাময় হয়।
রক্ত প্রদরে – ২ গ্রাম কাঁটানটের শিকড় ১৫ গ্রাম রসাঞ্জন, আতপচাল ধোয়া জলে বেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
রক্ত পিত্তে – ১/২ চা-চামচ কাঁটানটের শিকড়ের রস, পরিমাণ মতো চিনি বা মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। গণোরিয়ায় কাাঁটানটের মুুল খুব উপকারী।

এছাড়া, আগুনে পোড়া, ব্রণ, ফোঁড়া পাকাতে, শরীরের পারদ বা অন্য বিষ দূর করতে। স্তনদুগ্ধ বৃদ্ধিতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে। কাঁটানটে শাকের এক অসাধারণ ক্ষমতা আছে।

আজকের লেখা, বাসক নিম কাঁটানট এর উপকারীতা জানলে অবাক হবেন! লেখায় কালোমেঘ এর কথাও বলা হয়েছে। এরকম আরও অসংখ্য ঔষধী গাছ পায়ে চেপে নস্ট করেছি। এখন চেস্টা করলেও আগের অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X