রোগ নির্নয়স্বাস্থ্য টিপস

রক্তস্বল্পতায় কি করবেন | রক্তহীনতা বলতে কি বুজায় | এ্যানিমিয়া দূর করার উপায়

রক্তস্বল্পতায় কি করবেন তা জানার আগে, জেনে নিতে হবে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানবদেহে রক্তের পরিমান কতটুকু থাকতে হয়। এবং সর্বনিন্ম পরিমান কত থাকতে হবে। নবজাতক থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমান কত থাকা আবশ্যক! রক্তস্বল্পতা বা এ্যানিমিয়া কিপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে সাধারণত রক্তের পরিমান প্রায় ৫ কেজির কাছাকাছি।

আর ১০০ মিলিলিটার রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমান ১৪.৬ গ্রাম থাকাটা স্বাভাবিক। আমাদের দেশে সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশীরভাগ রক্তে প্রতি ১০০ মিঃলিঃ তে ১২.৫ গ্রাম অর্থাৎ ৮৫% হিমোগ্লোবিন পাওয়া গেলে মোটামুটি স্বাভাবিক বলেই ধরা হয়।আবার একজন পুরুষের তুলনায় মহিলাদের ২ গ্রাম হিমোগ্লোবিন কম থাকে, তা হতে পারে হরমোন জনিত বা প্রাকৃতিক কারনে, যা ই হোক মহিলাদের ১০.৫ গ্রাম হিমোগ্লোবিন পাওয়া গেলে, এটাই নরমাল ভ্যালু হিসাবেই ধরা হয়।

একটি নবজাতক জন্মের পর পর হিমোগ্লোবিন টেস্ট করলে দেখা যাবে – প্রতি ১০০ মিঃলিঃতে ১৮ গ্রাম হিমোগ্লোবিন পাওয়া যায়। তবে জন্মের ৩ মাসের মধ্যে তা অর্ধেক কমে যেতে পারে। সঠিক পরিমানে বুকের দুধ পেলে তা আবার ৬ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। অর্থাৎ ১২-১৪ গ্রাম হিমোগ্লোবিন পুর্ণ হয়।

রক্তস্বল্পতার কারন সমূহ বা রক্তহীনতার কারন

রক্তস্বল্পতা বা এ্যানিমিয়ার কারন সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া এবং অস্থিমজ্জা পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাভাবিক লোহিত রক্তক্ষণিকা উৎপাদন করতে না পারা। শরীরে অত্যাধিক হারে রক্তকোষে ভাঙ্গন, যা পুণঃস্থাপনে অস্থিমজ্জার ব্যর্থতা। তবে শরীরে আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষনে ব্যর্থতাই সারা পৃথিবীতে এ্যানিমিয়ার অন্যতম কারন।

রক্তস্বল্পতার প্রধান কারন প্রয়োজনীয় আয়রনের অভাব দেখা দেয়ার সাধারণ কারন – শরীর থেকে রক্তক্ষরণ বা রক্ত হারানো। স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়ম কানুন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে হুকওয়ার্ম কৃমির আক্রমনে আমাদের অন্ত্র থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

রক্তস্বল্পতার প্রকারভেদ

দেহ থেকে রক্তক্ষয় হওয়া। লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে অপর্যাপ্ততা। রক্তকণিকার অতিরিক্ত ভাঙ্গন জনিত রক্তহীনতা। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সমূহের সাথে জরিত রক্তহীনতা – যেমন দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ, রোগজীবাণুর সংক্রমণ, ক্যান্সার, বাত বা অর্থাইটিসে রক্তহীনতা দেখা দেয়। আরও অনেক রোগ থেকেই রক্তস্বল্পতা বা রক্তহীনতা অথবা এ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে। আলাদা নামে সব একই সমস্যা।

রক্তস্বল্পতা বা এ্যানিমিয়ার লক্ষন

সামান্য রক্তস্বল্পতার রোগী তেমন কোন লক্ষন উপলব্ধি করতে না পারলেও সামান্য পরিশ্রম করলে বা বেশীক্ষণ জোরে কথা বললে শ্বাসকষ্ট ও বুক ধরপর করার অভিযোগ থাকে। মাঝারী ধরনের এ্যানিমিয়ার রোগীর মাথায় ঝিম ঝিম ভাব, মাথা ঘুরানো, মাথা ব্যথা, চোখে ভালভাবে দেখতে না পাওয়া, কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ, বয়স্ক রক্তস্বল্পতার রোগীর হৃদপিন্ডে রক্ত সরবরাহের ঘাটতির কারনে, এ্যানজাইনার বুক ব্যথা হয় বা হতে পারে।

রক্তনালীতে অপর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের কারণে রোগীর ক্ষুধামান্দ্য, আজীর্ণ বা বদহজম, বমিভাব, মলত্যাগে অনিয়ম ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। শরীরের ত্বকে রক্ত সরবরাহের অপর্যাপ্ততার কারণে রোগীর ভিতর শীত শীত লাগা বা অল্প ঠান্ডায় খুব শীত অনুভুত হয়।

স্ত্রীলোক হলে, অনিয়মিত মাসিক আর পুরুষ রোগীর লিঙ্গোত্থানে বাধা ও যৌন ক্ষুধা লোপ পায়। দীর্ঘদিন রক্তস্বল্পতা বা এ্যানিমিয়া থাকলে হৃদপিন্ডের ব্যর্থতা ও রোগীর পায়ের গোরালিতে পানি চলে আসতে পারে। এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা বা এ্যানিমিয়া দূর করার উপায়

কারনজনিত রোগের চিকিৎসা করা। হুকওয়ার্ম ও রাউন্ডওয়ার্ম অর্থাৎ কৃমির ঔষধ প্রতি ৩ মাস পর পর নিয়মিত সেবন করা। পেটের অসুখ থাকলে বা আইবিএস থাকলে, তার চিকিৎসা করা। তা নাহলে প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা এবং আয়রনযুক্ত খাবারও দেয়া যাবেনা।

তাই দ্রুত চিকিৎসা নেয়া জরুরী। রক্তের ঔষধ দিতে হলে, আগে পেটের অসুখ আছে কিনা, তা জেনে নিতে হবে। যদি থাকে – তাহলে রক্তের ঔষধ দেয়া যাবেনা। ফেরাস সালফেট, ফেরাস গ্লকোনেট, ফেরাস ফিউমারেট, ফলিক এসিড ইত্যাদি দিয়েই এ্যানিমিয়ার চিকিৎসা করা সম্ভব।

লালশাক, কচুশাক, প্রোটিন ও ভিটামিন জাতীয় খাবার যেমন – ডিম, ছোলা ভেজা, বড় মাছের মাথা, কলিজা ইত্যাদি খেতে হবে। হালকা গরম পানিতে গোসল করতে হবে।

রক্তহীনতয় আয়ুর্বেদিক ঔষধ খুব কার্যকর

রক্তহীনতায় আয়ুর্বেদিক বা ইউনানি ঔষধ অন্যান্য ঔষধের তুলনায় ভাল করার প্রমান আছে। যেমন ইউনানী ফওলাদ গ্রুপের ঔষধ দ্ধারা আমি নিজে অনেক রোগীর রক্তস্বল্পতায় দারুন রেজাল্ট পেয়েছি। আবার জিগার নামক সিরাপটি রক্তস্বল্পতায় ভাল কাজ করে। হাতের কাছে পেলে ১ মাস ৩ চামচ করে দিনে ২ বার সেবন করে দেখতে পারেন। এটি লিভারের জন্যও চমৎকার।

আরও পড়ুন – মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যাবহারে চোখের কি ক্ষতি হচ্ছে | চোখের যত্নে কি করবেন

কোন ঔষধ কিভাবে খেতে হয় | ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

ধুমপান ছাড়ার উপায় বা ধূমপান থেকে মুক্তি

নাকের পলিপাস দূর করার উপায়

ডায়বেটিস – হৃদরোগ ও ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমাতে বাঁশের কোড়ল কিভাবে খেতে হয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X