সতর্কতাসাধারন জ্ঞানস্বাস্থ্য টিপস

ইনফেকশন জনিত বিভিন্ন রোগ ও তার চিকিৎসা

ইনফেকশন জনিত বিভিন্ন রোগ ও তার চিকিৎসা।
মানবদেহের বিভিন্ন রোগ জীবাণুর আক্রমনকে ইনফেকশন (Infaction ) বলে। এধরনের জীবাণুর আক্রমনে মানবদেহে বিভিন্ন রোগের উৎপত্তি হয় বা হতে পারে। রোগজীবাণু ও এন্টিঅক্সিজেন দেহের মধ্যে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে, রোগ জীবাণুগুলো যুদ্ধে জয়ী হয়। এবং রোগের প্রকাশ ঘটায়। এই ইনফেকশনজনিত রোগ ব্যাধির চিকিৎসা করতে হলে। প্রথমে রোগ নির্নয় করতে হবে। এবং জানতে হবে কোন ধরনের জীবাণুর প্রভাবে সংক্রমিত হয়েছে।

ইনফেকশন এর লক্ষন :

বিভিন্ন লক্ষনের মাধ্যমে জীবাণুগুলো তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটায়। এসমস্থ লক্ষনের মধ্যে, জ্বর, ঘাম, শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমন, আন্ত্রিক গোলযোগ, হৃদযন্ত্র ও রক্তসংবহনতন্ত্রে সংক্রমন। এবং প্রস্রাবে ইনফেকশন, ও রক্তের পরিবর্তন ইত্যাদি লক্ষন প্রকাশ পায়।

জ্বর ( Fever / pyrexia )

কখনও ইনফেকশন হলে তা জ্বর fever এর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সাধারনতঃ বগলের নিচে ৯৭.৪ এবং জিহ্বায় ৯৮.৪ ফারেনহাইট হয়। প্রকৃত জ্বর হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

ঘাম ( sweat )

জ্বর বাড়লে দেহের চামড়া গরম হয়। জ্বর ছাড়ার পূর্বে শরীরে ঘাম হয়। এবং ঘামের পরিমান বেশী হলে, দেহে ঘামাচির মত দানা বের হয়। তবে বাতজ্বর Rheumatic fever এ সবসময় ঘাম হয়।

শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন :

নাড়ীর গতির সাথে তাল মিলিয়ে শ্বাসের গতিও বেড়ে যায়। সাধারন জ্বরে নাড়ীর গতি ৪ ও শ্বাসের গতি ১ অর্থাৎ ৪:১ হয়। কিন্তু শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন হলে, নাড়ীর গতি কমে শ্বাসের গতি বেড়ে যায়। অর্থাৎ নাড়ী ৩ ও শ্বাসের গতি ১ হয়। অনুপাতের হিসাবে ৩:১ হতে পারে।

আন্ত্রিক গোলযোগ :

ইনফেকশনের জন্য জ্বর হলে সাধারনতঃ জিহবা শুকনো দেখায়। ঠোঁটে ও দাঁতে দূর্গন্ধযুক্ত কিছু দেখা দিতে পারে। কখনও বমি বমি ভাব হয়। কখনও বমি বা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। জ্বরে ক্ষুধা কমে যেতে পারে।

হৃদযন্ত্র ও রক্তসংবহনতন্ত্রে ইনফেকশন :

ইনফেকশনের কারনে জ্বরের সঙ্গে হার্টের গতি বৃদ্ধি পায়। এবং সেই সাথে নাড়ীর গতিও বেড়ে যায়। তবে টাইফয়েড জাতীয় এনটেরিক জ্বর, মেনিনজাইটিস ভাইরাল ইনফেকশনে নাড়ী ( pulse ) তাপমাত্রার তুলনায় ধীর থাকে। সব ক্ষেত্রে নাড়ীর এই অবস্থা এক হয়না।

প্রস্রাবে ইনফেকশন :

প্রস্রাবের রং হলুদ হয়। অনেকে ভুল করে জন্ডিস মনে করে। জ্বরের প্রভাবে প্রস্রাব কমে যায় এবং ঘন ঘন হয়। প্রস্রাব পরিক্ষা করলে প্রস্রাবে এলবুমিন ধরা পড়ে।

রক্তের পরিবর্তন :

রক্ত blood পরিক্ষা করলে, লিউকোসাইট বাড়তে দেখা যায়। রক্তের reaction এসিডোসিস হতে পারে। বেশীদিন জ্বরে ভুগলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

ইনফেকশন এর পরিক্ষা :

রক্ত, মল, মুত্র, কফ পরিক্ষা করতে হতে পারে এবং x-ray ও করা দরকার।
বাহিরের লক্ষন নাড়ী, শ্বাস প্রশ্বাস, তাপমাত্রার ধরন, প্রভৃতি সহ বিভিন্ন বিষয় পরিক্ষা নীরিক্ষা করে ডায়গনসিস করতে হয়।

জ্বর ও ইনফেকশনের চিকিৎসা :

  • ইনফেকশন জনিত বিভিন্ন রোগ এ জ্বর হলে রোগীকে অবশ্যই পুর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। প্রচুর আলো বাতাস পায়, এমন ঘরে শুতে হবে।
  • রোগীকে বেশী করে পানি ও তরল খাবার দিতে হবে। প্রত্যহ কমপক্ষে ১.৫ – ২ লিটার তরল খাদ্য ও পানি দিতে হবে।
  • রোগী যা খেতে চায় তাই দিতে হবে। পেটের রোগে হালকা ও পুষ্টিকর খাবার দেয়া প্রয়োজন। পেটের গোলযোগ বাড়ে এমন পুষ্টিকর খাবার দেয়া যাবেনা।
  • রোগী যেন আরামে ঘুমাতে পারে, সেদিকে যত্নবান হওয়া। নিদ্রাহীনতা দেখা দিলে, দেহমন শান্ত রাখতে ট্রাংকুলাইজার ঔষধ দেয়া যেতে পারে।
  • মুল রোগজীবাণু ধ্বংশ করতে, পরিক্ষা নীরিক্ষা করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা করাতে হবে।

ইনফেকশন প্রতিরোধ :

  • যেসকল প্রানীর মাধ্যমে রোগ জীবাণুর ইনফেকশন ঘটে, তাদেরকে নির্মুল করতে হবে। যেমন – কিউলেক্স মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া, এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু, উকুনের মাধ্যমে ফাইলেরিয়া, মাছির মাধ্যমে কলেরা ও টাইফয়েড হয়।
  • টিকা বা ভ্যাকসিন দ্বারা দেহের মধ্যে এন্টিবডি সৃস্টি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। ডিপথেরিয়া, পোলিও, মাইলাইটিস, ও ধনুস্টংকার এর জন্য DPT টিকা নিতে হয়। টি বি এর জন্য B C G, হেপাটাইটিস B ও বসন্তের জন্যও টিকা বা ভ্যাকসিন নিতে হয়।
  • জীবাণুনাশক স্প্রে ঘরে ছিটাতে হয়, এবং ঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। স্যাঁত স্যাঁতে ঘরে জীবাণু বাসা বাঁধে। বিশেষকরে ফাঙ্গাস তৈরী হয়।
  • ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত রোগীকে আলাদা ঘরে রাখা উচিত। টিবি বা যক্ষা এবং হেপাটাইটিসসহ এজাতীয় রোগীকে আলাদা খাবার ও পানীয় পাত্রের ব্যাবস্থা করতে হবে।
  • ইনফেকশন জনিত বিভিন্ন রোগ এর জন্য, দেহকে শক্তিশালী ও সবল করে গড়ে তুলতে হবে। যাতে রোগজীবাণুর আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এজন্য ভিটামিন ই ও সি পর্যাপ্ত থাকা উচিত। ভিটামিন ডি৩ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে, প্রয়োজন অনুসারে এগুলো খাওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X