সাধারন জ্ঞানস্বাস্থ্য টিপস

টনসিল এর ঔষধ কি | প্রাথমিক চিকিৎসা

গলার ভিতরে দুই পাশে দুইটি গ্রন্থি পিন্ড আছে, এর নাম টনসিল। ইহা ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। স্ট্রেপটোকক্কাস হেমোলাইটিকাস নামক জীবাণু দ্বারা গলগ্রন্থির প্রদাহ হয়ে থাকে, এটা অনেকটা সুপারির মতো বড় হয়। সাধারনতঃ শিশুদেরকে গলগ্রন্থির সদ্য প্রদাহে বেশী আক্রান্ত হতে দেখা যায়। টনসিল এর ঔষধ কি বিস্তারিত

তবে যেকোন বয়সীরাই টনসিলাইটিস রোগে আক্রান্ত হয় বা হতে পারে। ইহা একটি সংক্রমক রোগ। মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম, অতিরিক্ত ঠান্ডার মধ্যে রাত্রি জাগরন করার ফলে, গলায় ঠান্ডা লাগলে, বা অপুষ্টিতে ভুগলে টনসিল হওয়ার আশংকা থাকে। মুখের ভিতর দিয়ে শ্বাসনালীতে কোন জীবাণু ঘটিত infaction এর সময়, দুপাশের টনসিল জীবাণুগুলোকে বাধা প্রদান করে। এই টনসিলগুলো দুর্বল হলে, জীবাণুগুলোকে বাধা দিতে অক্ষম হয়।

টনসিলাইটিসের লক্ষন :

  • ঢোক গিলতে ব্যথা বা তীব্র কস্ট হওয়া।
  • টনসিল ফুলে যায় এবং লাল হয়।
  • High fever অর্থা বেশী মাত্রায় জ্বর হয়। কারো কারো জ্বর তেমন থাকেনা।
  • আলোর সাহায্যে টনসিল দেখতে পাওয়া যায়।
  • চোয়ালের নীচে টনসিলের লিষ্ফ গ্লাণ্ড বড় ও ব্যথাযুক্ত হয়।
  • মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, ঢোক গিলতে কষ্ট, থুথু আসা, শরীর ব্যথা, স্বরভঙ্গ ইত্যাদি লক্ষন দেখা দেয়।

টনসিলের প্রভাবে আরও যা হয় :

  • টনসিলের চারপাশে প্রদাহ হয়ে, এ্যাবসেস গঠন করলে, পেরিটনসিলার এ্যাবসেস বলে।
  • টনসিলের পেছনের দিকে, প্রদাহ হয়ে এ্যাবসেস এর ফলে রেটরোয়া রিঞ্জিয়াল এ্যাবসেস হয়।
  • জোরায় ব্যথা সহ ফুলে উঠতে পারে।
  • টনসিল থেকে সরাসরি রক্তে জীবাণু ছড়িয়ে পড়লে, সেপটিসিমিয়া হয়।
  • কিডনীতে প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
  • টনসিলের ইনফেকশনের জন্য কানের সাথে যে নল থাকে, তা কান পর্যন্ত পৌছে যেতে পারে। ছোট বাচ্চাদের ঘন ঘন সর্দি কাশি, বা টনসিলাইটিসের ফলে, কান পাকা রোগ হতে পারে।

টনসিল এর খাদ্য, পথ্য ও আনুসাঙ্গিক :

  • তরল ও লঘু অথচ পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চাদের জ্বর না থাকলে ভাত দেয়া যাবে, জ্বর থাকলে সাগু ও বার্লি খাওয়ানো উচিত।
  • কখনও ঠান্ডা লাগানো যাবেনা।
  • স্যাত স্যাতে পরিবেশ বর্জন করতে হবে।
  • গরম পানির সেঁক দিতে হবে। লবন পানি গরম করে গার্গল করতে হয়।
  • দিনে ২-৩ বার মেনথলের বাষ্প নিলে উপকার পাওয়া যায়।
  • নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে।
  • লবঙ্গ ও কালোজিরার তেল একত্রে কয়েক ফোঁটা দিয়ে, গরম পানি খেলে অনেক উপকার হয়।

পুরাতন টনসিলাইটিস :

ঠান্ডা লাগলেই প্রদাহ দেখা দেয়। এবং নিউরোসিস অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
টনসিল অনেক বড় হওয়ার ফলে, শ্বাস প্রশ্বাসে কস্ট হয়।
অনেকের কোন প্রকার কস্ট ছাড়াই রোগ দেখা দেয়। বার বার এ রোগ দেখা দেয়ায়, স্বাস্থ্য খারাপ হয়, এবং রক্তহীনতা দেখা দেয়।

টনসিল এর চিকিৎসা

ব্যাথার জন্য প্যারাসিটামল + টামাডল ১ টা করে ২-৩ বার খেতে পারেন। যেকোন একটি এন্টি হিস্টামিন যেমন ফেক্সোফেনাডিন অথবা রুপাটাডিন রোজ ১ টা ৫-৭ দিন সেবন করবেন। সাথে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে এমোক্সিসিলিন ৮ ঘন্টা পর পর ১ টা, এভাবে ৭ দিন খেতে হবে। বয়স অনুযায়ী ১২ বছরের নিচে ২৫০ মিগ্রা, আর ১২ বছরের ঊর্ধ্বে ৫০০ মিগ্রা। রোগের তীব্রতা বেশী হলে এমোক্সিসিলিন এর পরিবর্তে এ্যাজিথ্রোমাইসিন রোজ ১ টা এভাবে ৫ দিন খেতে হবে। তারপরও পরিবর্তন না হলে, ভাল ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেননা।

সতর্কতা :

টনসিলের পুজ পাকস্থলিতে গিয়ে, পাকস্থলিতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। আবার টনসিলের পুরাতন প্রদাহের সাথে পেটে শূল ব্যথার মতো, এক ধরনের ব্যথা দেখা দিতে পারে। এই রোগের ফলে রিউমাটয়েড অর্থাইটিস নামক জোরায় ব্যথা উৎপন্ন হতে পারে।

আরও পড়ুন – জণ্ডিস কি ও তার চিকিৎসা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
X