এন্টিবায়োটিক সম্পর্কে যা জানা দরকার | এবং আমাদের ভবিষ্যত কোন দিকে ?
এন্টিবায়োটিক নিয়ে সাধারন মানুষের মনে একটা ভয় কাজ করে। আবার কেউ একে তুচ্ছ মনে করে যেভাবে খুশি ব্যাবহার করে আসছে।এন্টিবায়োটিক আগামী প্রজন্ম কতটা হুমকিতে আছে, একটু ধারনা দেয়ার চেস্টা করবো।
এন্টিবায়োটিকের আবিস্কার :
এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছিলেন স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। ফ্লেমিং স্যার বলেছিলেন – এই এন্টিবায়োটিকের কারণে আজ কোটি কোটি লোক বেঁচে যাবে। কয়েক বছর পরই এগুলোর অপব্যাবহারের কারনে আর কাজ করবেনা। সামান্য সর্দি জ্বরে কোটি কোটি লোক মারা যেতে পারে।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কি :
এন্টিবায়োটিকের একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া নিধন করে। এটাকে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতিত খাওয়াও যাবেনা। আবার বন্ধও করা যাবেনা। এন্টিবায়োটিক খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। একটা নির্দিষ্ট ডোজে, একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক খেতে হয়। না খেলে যা হতে পারে তাকে বলা হয় এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স।
আরো পড়ুনঃ ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া পদ্ধতি। রুপচর্চা হোক নিরাপদ।
এন্টিবায়োটিকের ভয়ানক কান্ড :
ধরুন, আপনার দেহে এক লক্ষ ব্যাকটেরিয়া আছে। এগুলোকে মারার জন্য আমার ২১ টা এমক্সিসিলিন খাওয়া দরকার। এমক্সিসিলিন এক প্রকার এন্টিবায়োটিক। খেলাম আমি ১০ টা। ব্যাকটেরিয়া মরলো ৮০ হাজার এবং আমি সুস্থ হয়ে গেলাম। ২০ হাজার ব্যাকটেরিয়া কিন্তু রয়েই গেলো। এগুলো শরীরে ঘাটি ঘেরে বসে জটিল এক কান্ড করলো নিজেরা নিজেরা।
আরো পড়ুনঃ করোনা ভ্যাকসিন শরীরে কিভাবে কাজ করে।
তারা ভাবলো, যেহেতু এমক্সিসিলিন দিয়ে আমাদের ৮০ হাজার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। অতএব এবার আমাদেরকে এমক্সিসিলিন প্রুফ জ্যাকেট পরতে হবে। প্ল্যান করে থেমে থাকেনা এরা। বরং সত্যি সত্যি ব্যাকটেরিয়া গুলো, সবাই মিলে একটি করে জ্যাকেট তৈরি করে ফেলে। এবং এরা এমনভাবে বংশ বিস্তার করে, তাদের বাচ্চাদেরকেও সেই জ্যাকেট পরিয়ে দেয়।
এর ফলে যা হয়, পরের বার এমক্সিসিলিন নামক antibiotic আর কাজ করেনা।
ব্যাকটেরিয়া গুলো কিভাবে বেপোরোয়া হয় :
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, জ্যাকেট পরা ব্যাকটেরিয়া গুলো, কেবল ঐ ব্যাক্তির শরীরেই বসে থাকেনা। তিনি কারও সামনে হাঁচি অথবা কাশি দিলে, ব্যাকটেরিয়া গুলো সামনে থাকা ব্যাক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এভাবে ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। এক সময় পুরো এলাকায়ই আর ঐ এন্টিবায়োটিক কাজ করেনা। যারা খুব নিয়ম করে ওষুধ খান তারাও বিপদে পড়ে যান সবার সাথে সাথে।
আমরা খুব ভয়ংকর একটা সময়ের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। ব্যাকটেরিয়া আর তাদের বিভিন্ন উপায়ে প্রটেকশন এর তুলনায় এন্টিবায়োটিকের সংখ্যা খুব বেশি না। অনেক এন্টিবায়োটিক এখন আর কাজ করেনা, বাকিগুলোর ক্ষমতাও কমে আসছে। আমাদের বড় বড় হসপিটাল থাকবে, সেখানে বড় বড় ডাক্তার থাকবে। এফসিপিএস, এমডি, পিএইচডি এমফিল করা ডাক্তাররা থাকবেন কিন্তু কারোরই কিছু করার থাকবেনা। সামান্য সর্দি জ্বরেই রোগী মারা যাবে। অসহায়ের মত আত্মসমর্পন করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবেনা।
আরো পড়ুনঃ চোখের বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার।
উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থা আলাদা। তারা নিয়ম মেনে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করে। বিপদে আছি আমরা নিন্ম মধ্যবিত্ত কয়েকটি দেশের মানুষ। বিশেষকরে বাংলাদেশে তো প্রায় সাবাই ডাক্তার। কয়েকটা ঔষধের নাম জানলেই হলো।
মেডিসিনের বাইবেল নামে পরিচিত ডেভিডসের বইয়েও আমাদের এই উপমহাদেশের উল্লেখ আছে আলাদা করে। অনেক ট্রিটমেন্টে বলা হয়েছে,
“This organism is registrant against this Drugs in Indian subcontinent”
আরো পড়ুনঃ মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন কি ধরনের ক্ষতি করে।
টিভি ও পত্রিকায় নানান বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা হয়। কিভাবে টয়লেট সেরে হাত ধুতে হবে, কাশি হলে ডাক্তার দেখাতে হবে, নিরাপদ পানি খেতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এন্টিবায়োটিক নিয়ে কোনো কিছু আজও চোখে পড়েনি। অথচ এটা অন্যগুলোর চেয়েও জরুরী। এন্টিবায়োটিক কাজ না করলে এত সচেতনতা দিয়েও আর লাভ হবেনা।
কেউটে সাপ নিয়ে খেলছে ফার্ম্মেসীওয়ালারা :
রোগী ফার্মেসীতে গিয়ে একটু জ্বরের কথা বললেই ফার্মেসীতে বসে থাকা সেই লোকটি দিয়ে দিচ্ছে। Azithromycin অথবা cefixime বা cefuroxime নাহয় levofloxacin নামক কিছু নামকরা দামী antibiotic. খুব বেশী হলে ৪ টি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল কেটে দিয়ে বলে দেয় এই ওষধগুলি খাবেন সব রোগ ভালো হয়ে যাবে। আর এই ভাবেই আস্তে আস্তে Resistance হচ্ছে সব antibiotic।
ঔষধ নিয়ে সচেতনতা :
চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে যারা জড়িত, বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এখনই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা উচিত। সবাইকে এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। না হলে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার।
রোগবালাই সবসময় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করে থাকে। রোগবালাই সাথেই থাকুন।
প্রতিদিনের স্বাস্থ্য খবর গুলো ফেসবুকে পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।