কোন রোগের জন্য কি ঔষধ খাবেন | First Aid
কোন রোগের জন্য কি ঔষধ খেতে হয় তার একটা ধারনা দেয়ার জন্য এই লেখা। অনেক সময় গ্রামের ডাক্তারের কাছে গেলে এবং এই সমস্যার কথা বললে এতোগুলো ঔষধ ব্যাগে গুজিয়ে দিবে। এতে টাকা ও জীবন দুটোই ঝুঁকিতে তাকে। তাই আজকে প্রাথমিক চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কিছু ঔষধের নাম লিখে দিলাম।
মাথা ব্যাথার ঔষধ
মাথা ব্যাথায় প্রথমত প্যারাসিটামল ৫০০ অথবা এক্স আর মানে এক্সটেন্ড রিলিজ যেমন, নাপা xr, এইস XR, XPA XR, এর যেকোন একটি সাথে ফ্রেনজিট জাতীয় একটি ট্যাবলেট খেতে পারেন।
বেশী ব্যাথা হলে, অথবা মাইগ্রেনের ব্যাথা হলে বেক্লোফেন জাতীয় ৫ মিগ্রা সাথে যোগ করতে পারেন। অথবা টাফনিলও খেয়ে নিতে পারেন। তবে টাফনিল খেলে অন্যগুলো না খেলেও চলবে। আর টাফনিল বেশী খাওয়া ভাল নয়, এটাও খেয়াল রাখা উচিত।
গলা ব্যাথার ঔষধ
গলা ব্যাথায় প্যারাসিটামল বা এসিক্লোফেনাক খেলেই হয়। সাথে যেকোন এন্টিহিস্টামিন যেমন, সিটিরিজিন, রুপাটাডিন, কেটোটিফেন এই জাতীয় একটি ঔষধ খেতে হবে। গলাব্যাথা যেহেতু শ্বাসনালীর রোগ তাই মন্টিলুকাস্ট রোজ ১ টা খাওয়ার দরকার। এগুলো ৫-৭ দিন খেলে গলাব্যাথা সেরে যাবে। ১-২ দিন খাওয়ার পর, যদি না কমে তাহলে একটি এন্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত। অথবা নাক কান গলার ডাক্তার দেখাবেন।
ব্রণ দূর করার ঔষধ
ব্রণ বিভিন্ন কারনে হতে পারে, অতিরিক্ত ঘাম, তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। এর জন্য বেশী বেশী মুখ ধোয়া ও সাবান পরিত্যাগ করা উচিৎ। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিয়মিত মাসিক, ঘুম কম হওয়া এসব থেকেও ব্রণ হতে পারে।
ব্রণের চিকিৎসা সাধারণত বেটামেথাসন + নিওমাইসিন ক্রিম একসাথেই পাওয়া যায়। দিনে ২ বার ব্যাবহার করতে হবে। সাথে ক্লিন্ডামাইসিন ক্যাপসুল ৩০০ মিগ্রা দিনে ৩ বার বেশী করে পানিসহ ৭ দিন খেতে হবে। গ্যাকোটাচ সাবান এখানে খুব উপকারী। যদি পান সংগ্রহ করে নিবেন।
এতেও যদি ব্রন কমতে চায়না, তবে একজন স্কীন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
আমাশয় রোগের ঔষধ
আমাশয় হলে ঘন ঘন পায়খানার বেগ হয়, অথচ পায়খানা হয়না, সামান্য চর্বির মত মিউকাস নির্গত হয় এবং পেটে খুব ব্যাথা হয়। এভাবে কয়েকবার পায়খানা হলে শরীর খুব দূর্বল ও নিতর হয়ে পড়ে। আমাশয় হলে প্রচুর পানি পান করতে হয় ডায়রিয়ার মতই, এবং মেট্রোনিডাজল বয়স অনুপাতে ২০০-৪০০ মিগ্রা ট্যাবলেট দিনে ৩ বার ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন বয়স অনুযায়ী ২৫০-৫০০ মিগ্রা দিনে ২ বার, এবং নিটাজক্সানাইড দিনে ২ বার সেবন করলে আমাশয় ভাল হয়ে যাবে। তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হতে হবে।
জ্বর সর্দি কাশির ঔষধ
জ্বর সর্দি কাশির ঔষধ নিয়ে আমাদের আরেকটি লেখা আছে। প্যারাসিটামল জ্বরের জন্য বয়স অনুযায়ী ১২০ থেকে ৫০০ মিগ্রা দিনে ৩-৪ বার খাওয়া যাবে। সর্দির জন্য এন্টি হিস্টামিন সেটিরিজিন হলে দিনে ১-২ বার, ডেসলোরাটিডিন হলে দিনে ১ বার, ফেক্সোফেনাডিন হলেও দিনে ১ বার ৫-৭ দিন খেতে হবে। কাশি বিভিন্ন প্রকার, শুস্ক হলে মেনডিল সিরাপটি ট্রাই করবেন। ২ চামচ করে ৩ বার ৫ দিন। আর কফ যদি বের হয়, তাহলে এমব্রক্সল জাতীয় বা যেকোন ভাল একটি কফ সিরাপ খাবেন।
বেশী কাশি হলে, সাথে মন্টিলুকাস্ট ১০ মিগ্রা রোজ ১ টি ৭-১৫ দিন খেতে পারেন। এন্টিবায়োটিক এর প্রয়োজন হলে, আপাদত এজিথ্রোমাইসিন ট্যাবলেট রোজ ১ টি করে ৫ দিন সেবন করবেন।
দীর্ঘ দিন কফ কাশি থাকলে বা এন্টিবায়োটিক সহ কাশির ঔষধ খাওয়ার পরও যদি কাশি না কমে, তাহলে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স এ গিয়ে কফ টেস্ট করাবেন।
মাসিক না হলে ঔষধ
মাসিক না হলে, বয়স ও বৈবাহিক অবস্থা জানতে হবে। যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে রক্তস্বল্পতা আছে কিনা তা জানার দরকার। অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা আছে কি না জানতে হবে। প্রচুর আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে। সাথে ক্যালসিয়াম থাকা উচিৎ। ইউনানী সিরাপ নিসওয়ান জাতীয় ঔষধ কয়েক মাস সেবন করা যায়। বিবাহিত হলে ডাক্তারে সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করা উচিৎ।
কৃমির ঔষধ
কৃমির ঔষধ প্রতি ৩ মাস পর পর না খেলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। রক্তস্বল্পতা, অর্শ্ব গেজ, খোস পাচড়াসহ অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। এজন্য অবশ্যই ক্রিমির ঔষধ ৩ মাস পর পর একডোজ খাওয়া উচিত। আমি একটু ব্যাতিক্রমি সাজেশন করি, এই বার যদি এ্যালবেনডাজল জাতীয় ঔষধ খান, পরের বার মেবেনডাজল জাতীয় ট্যাবলেট খাবেন।
এলবেনডাজল ৪০০ মিগ্রা ট্যাবলেট ১ টি রাতে শোয়ার আগে চুষে খাবেন। প্রয়োজনে আবার ৭ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ খাবেন। এর পর থেকে ৩ মাস পর মেবেনডাজল জাতীয় সোলাস ট্যাবলেট ১০০ মিগ্রা, সকাল ও রাতে অর্থাৎ দিনে ২ বার ৩ দিন চুষে খেতে হবে। প্রয়োজনে ১৫ দিন পর আবার ২য় ডোজ সম্পন্ন করে নিবেন।
স্কিন এলার্জির ঔষধ
স্কিন এলার্জির ঔষধ সাধারণত এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ। সেটিরিজিন,লিভোসেটিরিজিন, রুপাটাডিন, বিলাস্টিন, এগুলোই এন্টি হিস্টামিন। রোজ রাতে ১ টি করে খাবেন, ১৫-৩০ দিন। সাথে এন্টিফাঙ্গাল ঔষধ ৭-১০ দিন খেতে পারেন। শুষ্ক চুলকানি বা ঘা পাচড়া থাকলে পারমেথ্রিন ক্রিম রাতে ১ বার সমস্থ শরীরে ব্যাবহার করতে পারেন। প্রয়োজনে আবার ১ সপ্তাহ পর ব্যাবহার করবেন। বেশীদিন আগের সমস্যা হলে ৩ দিন ৩ টা এ্যাজিথ্রোমাইসিন রোজ সকালে খালি পেটে ১ টা করে খাবেন। একটু ভাল পরিবেশে থাকার চেস্টা করবেন।
টনসিলের ঔষধ
টনসিলে সাধারণত সতর্কতা ই হলো মুল ঔষধ। ফ্রিজের পানি বর্জন করা, কুসুম গরম পানি পান করা। সমস্যা দেখা দিলে এমোক্সিসিলিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক বয়স অনুযায়ী ২৫০-৫০০ মিগ্রা দিনে ৩ বার ৭ দিন খেতে হবে। সাথে প্যারাসিটামল দিনে ৩ বারও ফেক্সোফেনাডিন দিনে ১ বার, সেবন করতে হবে। সমস্যা বেশী হলে ভাল একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাবেন। কারন থার্ড জেনারেশনের এন্টিবায়োটিক এর প্রয়োজন হতে পারে। এটা এখানে লিখে দেয়া উচিত নয়।
চুলকানি দূর করার ঔষধ
এলার্জির ঔষধের মতই অনেকটা চুলকানীর ঔষধ। কয়েকদিন এলাট্রল জাতীয় ঔষধ খান, অথবা রুপা ট্যাবলেট রোজ ১ টা করে খাবেন। সাথে হামদর্দ এর ছাফি সিরাপ ২-৩ চামচ করে ২-৩ বার খান। এভাবে ২ মাস খেলে চুলকানি কমে যাবে। পাগলা মলম টলম চুলকানি কমাতে পারেনা।
প্রস্রাবের ইনফেকশনের ঔষধ
প্রস্রাবে ইনফেকশন অর্থাৎ UTI এর সমস্যা থাকলে খুব যন্ত্রনা হয়, এর জন্য প্রচুর লেবুর সরবত খেতে হয়। সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক বয়স অনুযায়ী ২৫০-৫০০ মিগ্রা দিনে ২ বার ৫-৭ দিন সেবন করতে হবে। সাথে সিভিট জাতীয় ট্যাবলেট দিনে ২ বার চুষে খাবেন।
এরপরও সমস্যা দেখা দিলে সেফুরক্সিম ২৫০ মিগ্রা ট্যাবলেট দিনে ২ বার ৭ – ১০ দিন সেবন করা উচিৎ।
খুব বেশী সমস্যা হলে অফুরান এস আর দিনে ১ টা ১০ দিন একটানা খেতে হবে।
প্রচুর পানি ও লেবুর সরবত পান করা দরকার।
দাউদ এর ঔষধ
দাউদের জন্য ইকোনাজল নাইট্রেট ১% + ট্রায়ামসিনোলন ০.১% ক্রিম দিনে ২ বার ব্যাবহার করবেন। যেমন, ফাঙ্গিসন, ট্রাইকোডার্মা, এভিসন, ইত্যাদি নামে ফার্ম্মেসীতে পাওয়া যায়। সাথে ফ্লুকোনাজল ৫০ মিগ্রা রোজ রাতে ১ টা ১০ দিন, এবং ডেল্টাসন ৫ মিগ্রা রোজ ২ বার ৫ দিন, সেটিরিজিন জাতীয় ঔষধ রোজ ১-২ বার ৫ দিন খাবেন।
পুরাতন ব্যাবহারী কাপড় গরম পানিতে ধুয়ে ভাল করে শুকাবেন। নখ ছোট করবেন। ভাল হয়ে যাবে।
বমি বন্ধ করার ঔষধ
বমি বন্ধ করার ঔষধ অনেক ধরনের আছে। ভ্রমনজনিত বমি বন্ধ করতে হলে, জয়ট্রিপ ট্যাবলেট খেয়ে ভ্রমন শুরু করবেন। হঠাৎ কোন কারনে বমি হলে, অন্ডানসেট্রন জাতীয় যেমন, জোফরা, অনসেট, ইমিস্ট্যাট যেকোন একটি ট্যাবলেট ১ টি করে দিনে ২-৩ বার খাওয়া যাবে। বমি বন্ধ হলে আর লাগবেনা। প্রয়োজনে এগুলোর ইঞ্জেকশন ও দিতে পারবেন।
গর্ভবতীর বমি বন্ধ করতে হলে, পেলোনোসেট্রন জাতীয় ঔষধ ভাল কাজ করে, যেমন – পেলক্সি, পেলোরন, ইত্যাদি
এছাড়াও এক্লিজ প্লাস বা মিক্লিজিন গ্রুপের ঔষধেও বমি বন্দ হয়।
মুখের দূর্গন্ধ দূর করার ঔষধ
মুখের দূর্গন্ধ দূর করার একটা দারুন ঔষধ এখানে বলে দিচ্ছি, আগে ঔষধ বলে দেই তারপর পথ্যের কথা বলব।
মেট্রোনিডাজল ৪০০ মিগ্রা দিনে ২ বার ১৫ দিন খাবেন। সাথে সিভিট দিনে ২ বার। টাইমলি খাবার খাবেন। আর পথ্য হলো – এলাচি চাবাবেন, কয়েকদিন এলাচি চিবাইলে মুখের দূর্গন্ধ দূর হয়।
পেট ব্যাথার ঔষধ
গ্যাস্ট্রিক থেকে পেট ব্যাথা হলে ওমিপ্রাজল অথবা ইসোমিপ্রাজল দিনে ২ বার সাথে এ্যালজিন ট্যাবলেট ১-২ টি করে দিনে ৩ বার। রাতে ট্রিপটিন ১০ মিগ্রা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে ভুলে যাবেন পেট ব্যাথার কথা।